অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ভাইভা ফলাফলে বৈষম্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ফলাফল পুনঃবিবেচনা ও সনদ প্রদানের দাবিতে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনের পুরো রাস্তা আটকে দেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। এতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
রোববার (২২ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা এ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশ নেওয়া সব প্রার্থীকে সনদ দেওয়ার ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় পুলিশ তাদের সরে যেতে বলেন। অনুরোধেও না সরলে তাদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ।
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায় বসার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থী। গত ৪ জুন চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হলে তাদের মধ্য থেকে ৬০ হাজার ৫২১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।
অনুত্তীর্ণ ২৩ হাজার প্রার্থীর একাংশ রোববার সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের উত্তীর্ণ ঘোষণা করে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দেওয়ার দাবি জানায়।
অনুত্তীর্ণ প্রার্থীদের দাবি, তারা প্রিলিমিনারি ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ভাইভায় ভালো করলেও তাদের ‘ফেল করানো হয়েছে’। তাই তারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ দাবি করছেন।
মাদরাসার আইসিটি প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হতে অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে না পারা সিরাজগঞ্জের প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভাইভায় ২৩ হাজার প্রার্থী ফেল করেছে। যাদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ভাইভায় অনুপস্থিত ছিলেন বা তাদের পদের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সামঞ্জস্য নেই। বাকি ২০ হাজার প্রার্থীকে ভাইভায় ফেল করানো হয়েছে। আগে আমরা দেখেছি, এনটিআরসিএ ভাইভায় ফেল করায় না। সেখানে আমাদের ২০ হাজার প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে।
আমার দাবি ও আমাদের সবার দাবি, আমাদের সনদ দিতে হবে। এনটিআরসিএ চাকরি দেয় না, তারা একটা সনদ দেয় সে সনদপ্রাপ্তরা শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যদি আমরা চাকরি নাও পাই, ওই সনদ দিয়ে আমরা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে পারব।
আরবি প্রভাষক পদে নিবন্ধিত হতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিলেও উত্তীর্ণ হতে না পারা ঠাকুরগাঁওয়ের প্রার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, এ শিক্ষক নিবন্ধনে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৪ লাখ ৭৯ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় বসেন। তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছি, আমরা যোগ্য।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি, আমাদের যে ২০ হাজার প্রার্থীকে ভাইভায় অকৃতকার্য করা হয়েছে, আমাদের সকলের দাবি, সকলকে সনদ দিতে হবে।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এ পর্যায়ে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ। এরপর গত বছরের ১৪ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন উত্তীর্ণ হন, পাসের হার ছিল ২৪ শতাংশ। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।