চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আর পরীক্ষা মানেই চিন্তা, টেনশন। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে প্রেরণই করেছেন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে জন্মের পর থেকেই আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দাকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বা সফলতা চাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া কোরআনে বা হাদিসে বর্ণিত হয়নি। তবে যে কোনো কাজে আল্লাহর তওফিক ও সাহায্য প্রার্থনার জন্য যে দোয়াগুলো কোরআন-হাদিসে এসেছে, সেগুলো পরীক্ষার্থীরা পড়তে পারেন পরীক্ষায় ভালো করতে ও সফল হতে।
এখানে আমরা কোরআন ও হাদিস থেকে এ রকম দুটি দোয়া উল্লেখ করছি:
১. কোরআনে বর্ণিত হজরত মুসার (আ.) এ দোয়াটি পরীক্ষার্থীরা পড়তে পারেন:
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي
উচ্চারণ: রব্বি-শরাহ লি সাদরি ওয়া ইয়াসসির লি আমরি ওয়াহলুল উকদাতাম মিল-লিসানি ইয়াফকাহু কাওলি।
অর্থ: হে আমার রব, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন যেন তারা আমার কথা বুঝতে পারে। (সুরা তোয়াহা: ২৫-২৮)
২. হাদিসে বর্ণিত নবিজির (সা.) এ দোয়াটি পরীক্ষার্থীরা পড়তে পারেন:
اللَّهُمَّ لَا سَهْلَ إِلَّا مَا جَعَلْتَهُ سَهْلًا وَأَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ سَهْلًا إِذَا شِئْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জাআলতাহু সাহলা ওয়া আনতা তাজআলুল হাজনা সহলান ইজা শি’তা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিনকেও সহজ করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৪২৭)
উল্লেখ্য, পরীক্ষাসহ যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতা পেতে নিজের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পর আল্লাহ তাআলার সাহায্য চাইতে হয়, আল্লাহর ওপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল করতে হয়। নিজে যথাযথভাবে চেষ্টা না করে শুধু দোয়ার মাধ্যমে সফলতা পাওয়ার চেষ্টা করার শিক্ষা ইসলাম দেয় না। অনেকেই পড়াশোনা না করে, ফাঁকি দিয়ে সময় নষ্ট করে পরীক্ষার আগে দোয়া খুঁজে বেড়ান যেন শর্টকাট কোনো পদ্ধতিতে পরীক্ষার বৈতরণী পার হতে পারেন। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়।
দোয়ায় প্রকাশ পায় আল্লাহর ওপর ইমান ও ভরসা
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, প্রার্থনা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। দোয়ার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত লাভ করা যায়, আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচা যায়, শয়তানের ধোঁকা ও দুনিয়াবি বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়, একইভাবে দোয়ার মাধ্যমে ইমানও প্রকাশ পায়। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভরসা ও নির্ভরতা প্রকাশ পায়। বান্দার বিনয় ও অহংকারহীনতা প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সুরা গাফির: ৬০)
মুমিনের কল্যাণকর কোনো দোয়া ব্যর্থ হয় না
মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে যে কল্যাণকর দোয়া করে, তা কখনও ব্যর্থ হয় না। দোয়ার বদলা আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দান করেন। তবে বিভিন্ন সময় দোয়ার প্রতিদান বিভিন্ন রকম হয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি এমন দোয়া করে যে দোয়াতে কোনো পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় নেই, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া কবুল করে নেন; হয়তো যে দোয়া সে করেছে তা ওইভাবেই কবুল করেন, তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন অথবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন।
এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যত দোয়াই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। (বুখারি ফিল আদাবিল মুফরাদ)