শিক্ষার নিম্নমানে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমেছে | স্কুল নিউজ

শিক্ষার নিম্নমানে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমেছে

মৌলভীবাজারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ কমছে।

#স্কুল #শিক্ষক #শিক্ষার্থী #প্রাথমিক বিদ্যালয়

মৌলভীবাজারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ কমছে। লেখাপড়ার আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, প্রাথমিকে পড়ালেখার নিম্নমান ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাজার বা সড়কের পাশের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকলেও গ্রামের স্কুলগুলোতে খুব কম। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সংকট রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, বেসরকারি বিদ্যালয় বা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তার তুলনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের গুণগত মান আগের মতোই। তারা শিক্ষার্থীদের নতুন করে কিছু দিতে পারছেন না। সরকারি শিক্ষকদের মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষার্থীদের উপকার হতো বলে মনে করেন তারা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৬১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ১ হাজার ৫২টি। জেলায় কর্মরত প্রধান শিক্ষক ৭৭৬ জন। প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ ২৭৪টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক ৫ হাজার ১৫৬ জন। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২২৩টি। বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রধান শিক্ষকের পদে পদোন্নতি হচ্ছে না। কিছু বিদ্যালয়ে আসবাবের সংকট রয়েছে।

বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি কম। কোনো বিদ্যালয়ে ১০-১৫ জন, আবার কোথাও ২০-২৫ জন। মোট শিক্ষার্থীর এক-তৃতীয়াংশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে বিদ্যালয়ের ভর্তি খাতায় উপস্থিতির সংখ্যা অনেক বেশি। অবশ্য বাজার এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা বেশি। তবে সেগুলোতে আসবাব ও অবকাঠামোগত সংকটের পাশাপাশি শিক্ষক-সংকট রয়েছে।

এদিকে সরকারি প্রতিটি স্কুলে কাগজপত্রে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি রয়েছে; তবে এসব পরিচালনা কমিটি বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বা শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ।

সচেতন অভিভাবকেরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। কারণ, যারা এ উদ্যোগ নেওয়ার কথা, তাদের সন্তানদের এসব স্কুলে ভর্তি করান না। এসব স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। এ ছাড়া নিয়মিত বিদ্যালয় মনিটরিং না করায় শিক্ষকেরা বেশির ভাগ সময় ক্লাস ফাঁকি দেন। এসব সমস্যার সমাধান করলে শিক্ষার মান বাড়বে। একই সঙ্গে শিক্ষাবৃত্তি ও অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ না করে।

সিরাজ আহমদ নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার দুই সন্তান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল। পড়ালেখার মান ভালো না থাকায় তাদেরকে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। স্কুলে যেদিন শিক্ষার্থী থাকে, সেদিন শিক্ষক থাকেন না। আবার শিক্ষক থাকলে শিক্ষার্থী থাকে না। বেশির ভাগ স্কুলে স্থানীয় শিক্ষক থাকায় তাঁদের প্রভাব থাকে, এ জন্য তাঁরা ইচ্ছেমতো আশা-যাওয়া করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। পরীক্ষার সময় কিছুটা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।

প্রধান শিক্ষক-সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরাসরি খুব কম নিয়োগ হয়। বিভিন্ন জটিলতায় একসঙ্গে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হবে।

#স্কুল #শিক্ষক #শিক্ষার্থী #প্রাথমিক বিদ্যালয়