প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, ফুলবাড়ীতে পাঠদান বন্ধ | স্কুল নিউজ

প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, ফুলবাড়ীতে পাঠদান বন্ধ

প্রাথমিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি করা।

#স্কুল #শিক্ষক #কর্মবিরতি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির শুরুতে ১১ তম গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবিতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে অব্যাহত রয়েছে দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। এতে উপজেলার ১০৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।

গত সোমবার (২৬ মে) সকাল থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার ১০৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৯০ জন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মবিরতি শুরু করেন। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে শিক্ষকদের এই পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।

আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রাথমিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি করা।

মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বই খাতা নিয়ে পাঠ গ্রহণের আশায় শ্রেণীকক্ষে বসে আছে। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকেরা শিক্ষক কমনরুমে বসে আছেন। শ্রেণীকক্ষের বাইরে অভিভাবকদের কেউ দাঁড়িয়ে, কেউবা বসে আছেন।

একই চিত্র দেখা গেছে, ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরস্বতিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চকচকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁটাবাড়ী বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উষাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও।

সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ঈশিকা, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহুম মুনতাসীর বলে, তারা সবাই সকাল ৯টার মধ্যেই বই খাতা নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছে। ক্লাসে বসে অপেক্ষা করছে শিক্ষক জন্য। কিন্তু সাড়ে ১০টার পরও ক্লাসে কোনো শিক্ষক কিংবা কোনো মেডামেরও দেখা মেলেনি। কোনো পড়াও দিয়ে যাননি। তারা তাদের রুমে বসে গল্পগুজব ও মোবাইল টিকে সময় কাটাচ্ছেন। কয়দিন ধরে ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও কোনো শিক্ষক কিংবা মেডাম আসেন না।

একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা নাসরিন আক্তার বলেন, আমার মেয়েটা নিয়মিত স্কুলে যায়। এখন স্কুলে গিয়েও যদি ক্লাস না হয়, তাহলে সে তো অনেক পিছিয়ে পড়বে। ঘরে তো আমরা ঠিকভাবে পড়াতে পারি না। শিক্ষক ছাড়া শিশুরা কীভাবে শিখবে?

বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর পিতা রনি প্রসাদ বলেন, ছোট বয়েসেই যদি লেখাপড়ায় ছন্দপতন হয়, পরে তা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন হবে। শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ করা উচিত। যাতে করে আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে না পড়ে।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ফুলবাড়ীর আহবায়ক ও দেবিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক আবু তালেব, সদস্য সচিব ও গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফজলে রাব্বী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নিরানকুঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সৈয়দ আপেল মাহমুদ এবং সদস্য ও পূর্ব রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোয়ার সুলতান বলেন, অনেক শিক্ষক আছেন যারা ৩০ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করছেন। অথচ কোনো পদোন্নতি নেই। এজন্য শিক্ষকরা তাদের তিন দফা দাবি নিয়ে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ভাবছেন শিক্ষকরা ক্লাস না নিয়ে গল্প গুজব নিয়ে মেতে আছেন। অভিভাবকদের শিক্ষকদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হয়েছে। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা শাখা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এসকে মোহাম্মদ আলী দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আলিম বলেন, সহকারী শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে ক্লাস পরীক্ষা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তবে তাদের যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের শিক্ষক সমিতির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষকরা তাদের দাবি নিয়ে পূর্ণ দিবস কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে আসছে।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#স্কুল #শিক্ষক #কর্মবিরতি