নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ রিজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন পেয়েছিলেন। সর্বশেষ ঢাকা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে যোগদান করেন তিনি।
ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ রিজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় অধস্তন শিক্ষক-কর্মচারীদের এক ধরনের আতঙ্কে রাখেন। যার ফলে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস দেখায় না।
জানা গেছে, গত বছরের ৭ জুলাই টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন রিজিয়া সুলতানা। এরপর থেকে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শুরুতেই নিজের জন্য বরাদ্দ থাকা কোয়ার্টারে না উঠে কলেজের মহিলা হোস্টেলে একটা ব্লক দখল করেন। ছাত্রীদের ব্যাপক আপত্তির মুখে সেটি ছেড়ে দেন তিনি। এরপর তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে কলেজের বিজ্ঞান উন্নয়ন হোস্টেলের দ্বিতীয়তলায় তিনটি কক্ষ নিয়ে নামমাত্র খরচে নিয়মিত বসবাস করে আসছেন। অথচ এই হোস্টেল মূলত প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষকদের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তার জন্য বরাদ্দ করা কোয়ার্টারে থাকছেন সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক, যিনি এক বছরের বেশি সময় আগেই অবসরে চলে গেছেন। তার কাছ থেকে নিয়মিত ভাড়া নিচ্ছেন বর্তমান অধ্যক্ষ এমন অভিযোগও রয়েছে। এর আগে কুমিল্লায় এআই সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালে সেখানেও তিনি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের থাকার পাঁচটি কক্ষ দখলে নিয়ে দুই বছর বসবাস করেন।
এছাড়া ২০২২-এর ২৬ এপ্রিল থেকে প্রায় তিন মাস ফেনী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালেও কোনো প্রকার বিল প্রদান করেননি।
জানা গেছে, কলেজের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কমিটির বরাদ্দ করা টাকা থেকে একটা অংশ তাকে দিতে হয়। বাধ্য হয়ে কমিটির কর্মকর্তারা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে হিসাব বিবরণী সমন্বয় করেন। তাতে স্বাক্ষর করেন অধ্যক্ষ। বিটিটি এবং এইচআইটি বা এএইচআইটি প্রশিক্ষণ কোর্সে রিসোর্স পারসন হিসাবে নিজের নাম দিয়ে রাখেন অধ্যক্ষ। কিন্তু তিনি সেখানে কোনো ক্লাস নেন না। ক্লাস নেন অন্য কর্মকর্তারা। অথচ রিসোর্স পারসনের সম্মানির টাকা অধ্যক্ষ নিয়ে নেন। যেটি দিনের পর দিন হয়ে আসছে।
গত ১ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষক মূল্যায়ন ছকেও অধ্যক্ষের নামের বিপরীতে ‘শি হ্যাজ নট কনডাকটেড এনি সেশন’ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া কলেজে ট্রেনিং করতে আসা প্রশিক্ষণার্থীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষকদের জন্য সরবরাহ করা খাবারের মানে।
সর্বশেষ গত রমজানে (১০ মার্চ) প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলাকালে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করায় সেই খাবার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অধ্যক্ষ বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ দেন তারা। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ প্রতিটি কক্ষে গিয়ে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চান এবং খাবারের মান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এরপরও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন অব্যাহত রাখায় প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের মধ্য থেকে খাবারের পরিবর্তে খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত নগদ অর্থ দেওয়ার দাবি করা হয়।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে খাদ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ নিজেই ‘ফুডিং’ নামে খাদ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সরাসরি পরিচালনা করেন।
সম্প্রতি তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলেজের দুজন শিক্ষককে বদলি করেছেন। অন্য শিক্ষকদেরও এমন হুমকির মধ্যে রেখেছেন তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ রিজিয়া সুলতানা বলেন, আমার বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারে পিআরএলে যাওয়া সাবেক অধ্যক্ষ বসবাস করছেন। তিনি খুব অসুস্থ। তার পিআরএলের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। এছাড়া কোয়ার্টারে বসবাস করার মতো ভালো পরিবেশ নেই। তাই প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের হোস্টেলে থাকি।প্রশিক্ষণার্থীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন বিষয়ে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। সূত্র: যুগান্তর