গবেষণার পরিসর বাড়াতে কী করেছেন, প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন অধ্যাপক মামুনের | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

গবেষণার পরিসর বাড়াতে কী করেছেন, প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন অধ্যাপক মামুনের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যে মানের শিক্ষক তাদেরকে গবেষণার জন্য হাজার কোটি টাকা দিলেও তেমন ভালো গবেষণা হবে না। আগে দরকার মানসম্মত শিক্ষকের।

#গবেষণা #কামরুল হাসান মামুন #প্রধান উপদেষ্টা #ড. মুহাম্মদ ইউনূস

এইসব আহবান আর কত শুনব? গবেষণার পরিসর কি করলে বাড়ে? যা কিছু করলে বাড়ে তার এক বিন্দু পরিমান কিছু করেছেন? প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি এ প্রশ্ন ছুঁড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

১০৫তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আগেরদিন সোমবার এক বার্তায় ‘ঢাবিকে গবেষণার পরিসর বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। ওই আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে ওই প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক মামুন।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনি বলেছেন ‘বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্ভাবনের জন্য কাজ করতে, গবেষণার পরিসর বাড়াতে এবং গবেষণায় অর্জিত জ্ঞান দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রয়োগ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’ এইসব শুকনা কথায় কি কোন কাজ হবে? তিনি তার বাণীতে আরো বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতেও বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যাশিত অবদান রাখবে।’ যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই বিশ্বমানের উচ্চ শিক্ষা দিয়ে আসছে, যেন জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যাশিত অবদান রেখে আসছিল। যদি অবদান রাখতোই তাহলে দেশে এত দুর্নীতিবাজ রাজনীবিদ, দুর্নীতিবাজ আমলা, পুলিশ, ঠিকাদার, পাচারকারী এরা কোথা থেকে আসছে?

অধ্যাপক মামুন লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যে মানের শিক্ষক তাদেরকে গবেষণার জন্য হাজার কোটি টাকা দিলেও তেমন ভালো গবেষণা হবে না। আগে দরকার মানসম্মত শিক্ষকের। তাই আগে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করে আপনার উচিত ছিল একটা ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া যাতে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসেন। আপনি বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশি, এমনকি বিদেশিদেরও বাংলাদেশে শিক্ষকতায় আসার আহবান জানাতে পারতেন। তারপর শিক্ষায় জিসিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে গোটা বিশ্ব এবং দেশের মানুষদের একটা মেসেজ দিতে পারতেন যে আপনি আগে মানুষ তৈরির পথ বানাতে চান যেই মানুষেরা বাংলাদেশকে গড়বে। দেশে এখন ৯৯ শতাংশ মানুষ দুর্নীতিবাজ, অসৎ, ধান্দাবাজ। দেশের মানুষরূপি মানুষদের মানুষ না বানালে দেশ সুন্দর হবে না।

তিনি আরো লিখেছেন, বুঝলাম শিক্ষার জন্য কিছু করাকে আপনি প্রায়োরিটির মধ্যে রাখেন নি। আপনি কিসের মধ্যে প্রায়োরিটি দিয়েছেন? দেশে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ভালো করেছেন? দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা ভালো করেছেন? দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো করেছেন? দেশের বিমানবন্দর হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা ভালো করেছেন? দেশের পাসপোর্ট ব্যবস্থা, জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা, এনআইডি ব্যবস্থা ভালো করেছেন? তাহলে ভালোটা কি করেছেন? এর চেয়ে কি শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো করা সহজ ছিল না? এবং ওটাই ছিল মূল। আপনি ছাত্র জনতার একটা অভ্যুথানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। জুলাই আন্দোলন তো করেছিল প্রথমত এবং প্রধানত ছাত্ররা। সাথে ছিলাম আমরা শিক্ষকরা। আপনি ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য কি করেছেন? আগের হাসিনা সরকার শিক্ষায় যতটা বরাদ্দ দিত (জিডিপির ১.৬৯ শতাংশ) আপনি তাই দিয়েছেন। আপনার উপদেষ্টারা কি করছে? কেন সব এনজিও ব্যাকগ্রাউন্ড এর লোকজনদের উপদেষ্টা বানালেন? আমি তো আপনার উপদেষ্টাদের মাঝে আলোকিত তেমন কাউকে দেখছি না। আপনি ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে দেশে নারীরা কেন নিগৃহীত হতে থাকলো? কেন দেশ ধর্মান্ধতার দিকে যাত্রা শুরু করলো? এইসব কিছুর জবাব আপনাদের দিতে হবে। একবার শুধু জুলাইয়ের আন্দোলনের সময়ের দেয়ালের লেখাগুলো পড়ে দেখবেন, তাহলে সেখানে সত্যিকারের অভ্যুত্থানের স্পিরিট পাবেন। দেশ এখন সেই স্পিরিটে চলছে না। সুতরাং জুলাই জুলাই করে মায়াকান্না দেখাবেন না। কষ্ট হয়। এতগুলো ছেলেমেয়ে জীবন দিল এই বাংলাদেশ দেখার জন্য না।

#গবেষণা #কামরুল হাসান মামুন #প্রধান উপদেষ্টা #ড. মুহাম্মদ ইউনূস