অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। ছবি : সংগৃহীত
শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পরে অবশেষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য় অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমকে।
মঙ্গলবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, পৃথক আদেশে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এর আগে তিন জনকে অব্যাহতি দিয়ে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে গত সোমবার রাত থেকে আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুটি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর মোল্লা। সেখানে তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ঢাকা ও বরিশালের গেস্ট হাউজের আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরো পড়ুন: অবশেষে ববির ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারকে অব্যাহতি
তার পদত্যাগের চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, আরো তিনজন শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। তাদের পদত্যাগপত্রের ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন। আইকিউএস এর পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. মো. সোহেল চৌধুরী। তিনি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এছাড়া শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মামুনুর রহমান। তিনি অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
শিক্ষার্থীরা জানান, ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে গত সোমবার রাত থেকে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের পাঁচজন গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারো অনশনস্থলে আসেন, বাকি চারজনকে স্যালাইন দেওয়া হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ছেড়ে উঠবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, উপাচার্যের ডাকা ৮৭তম সিন্ডিকেট সভাকে অবৈধ দাবি করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাওয়ের একপর্যায়ে গেট ভাঙচুর করনে তারা। এই ঘটনায় ১৭ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা করা হয়।
এরপর মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্যকে একাধিকবার আলটিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে মুচলেকা দেওয়ার শর্তে মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন উপাচার্য। এই প্রস্তাবের পর ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তারপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মাঠে নামেন তারা।
গত ৭ মে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা দিয়ে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। পদত্যাগ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দেন তারা।
এরই মধ্যে ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ নিয়ে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির মতামত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে, গত ৮ মে ববি উপাচার্যকে অপসারণের প্রস্তাব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
এরপরেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানান শিক্ষকদের একাংশ। সেই ধারাবাহিকতায় গত ১১ মে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল এবং ১২ মে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে গত বছরের ২৩ সেপ্টম্বর ববির নতুন ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ পেয়েছিলৈন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন।
শুচিতা শারমিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসি এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ভিসিও তিনি।
নিয়োগে উল্লেখ করা শর্তগুলো- ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে তার নিয়োগের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে চার বছর হবে; উপর্যুক্ত পদে তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতা পাবেন; তিনি বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন; তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন এবং রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
তবে, অভিযোগ ছিলো তিনি বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় অবস্থান করতেন। এমনকি নিয়োগ পরীক্ষাও ঢাকায় বসে নিতেন। শুচিতার বিরুদ্ধে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে গভীর সখ্যতার প্রমাণ হিসেবে বহু ছবি ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিক্ষা প্রশাসনে বড় পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন শুচিতা। তিনি বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হকের কন্যা।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।