মামলায় ঝুলছে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের পদোন্নতি | স্কুল নিউজ

মামলায় ঝুলছে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের পদোন্নতি

মামলায় ঝুলে আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

#শিক্ষক #প্রধান শিক্ষক #সরকারি স্কুল #শিক্ষার্থী

মামলায় ঝুলে আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এ ছাড়া শূন্য এসব পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি না হওয়ায় সমসংখ্যক পদে সহকারী শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে এ পদগুলো পূরণ করা হবে। কিন্তু টাইম স্কেল সংক্রান্ত একটি মামলায় প্রধান শিক্ষকের এসব শূন্য পদে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না।

অধিদপ্তর বলছে, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলোতে পদোন্নতি দেওয়া হলে সমসংখ্যক সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য হবে। তখন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে ৩২ হাজার। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সহকারী শিক্ষকদের পদ শূন্য রয়েছে ৮ হাজার ৪৩টি। প্রধান শিক্ষকের ৩২ হাজার শূন্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হলে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য দাঁড়াবে ৪০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের জন্য ৫ হাজার ১৬৬ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেওয়া হয়নি।

সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধ লাখ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদান যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষকের অভাবে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদে ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদোন্নতি আমরা দিতে পারছি না। মামলার কারণে পদোন্নতি আটকে আছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে পারলে ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য হতো এবং আমরা তখন ওই পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারতাম। এ ব্যাপারে অধিদপ্তর আন্তরিক।’

শিক্ষকরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আদালতের আপিলের রায়ের ওপর নির্ভর করছে সব সিদ্ধান্ত।

যে কারণে আটকে আছে পদোন্নতি

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অবসরে গেছেন। অবসরে যাওয়া এসব শিক্ষকের মধ্যে অনেকে অবসর ভাতা তুলে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগস্ট এক আদেশে দুটি টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। সরকারের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পক্ষে হাইকোর্টে দায়ের করা হয় রিট আবেদন। হাইকোর্ট রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন। এরপর জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা ভেবেছিলেন সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু হাইকোর্টের রিটের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে, আপিল শেষ না হওয়ায় অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা তাদের পাওনা উত্তোলন করতে পারছেন না। তবে অর্থাভাবে অনেক শিক্ষক দুটি টাইম স্কেল কেটে রেখেই অবসরের অর্থ নিয়েছেন বলে জানান শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হাইকোর্টর রায়ের পর সরকার আপিল না করলে শিক্ষকদের ভোগান্তি থাকতো না। সরকার এই রিটে জিততে পারবে না জেনেও আপিল করেছে। ফলে অবসরে যাওয়া অনেক শিক্ষক মরে গেলেও তার পরিবার অবসরের অর্থ তুলতে পারছে না।

অন্যদিকে, আটকে গেছে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি। একই কারণে পদোন্নতি না দিতে পারায় সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার পদ শূন্য হয়নি। ফলে এসব পদে নিয়োগও দেওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান সরকার চাইলেই এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে পারে, বলেন তিনি।

#শিক্ষক #প্রধান শিক্ষক #সরকারি স্কুল #শিক্ষার্থী