ভুল সংবাদ প্রত্যাহারে শীর্ষে প্রথম আলো, দ্বিতীয় কালবেলা | বিবিধ নিউজ

ভুল সংবাদ প্রত্যাহারে শীর্ষে প্রথম আলো, দ্বিতীয় কালবেলা

দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ভুয়া (ফেইক) সংবাদ প্রকাশ ও পরে তা প্রত্যাহারের ঘটনা ক্রমবর্ধমান।

#সংবাদপত্র #প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ভুয়া (ফেইক) সংবাদ প্রকাশ ও পরে তা প্রত্যাহারের ঘটনা ক্রমবর্ধমান। সম্প্রতি প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দৈনিক প্রথম আলো। এর পরই দৈনিক কালবেলা এবং তৃতীয় অবস্থানে দৈনিক ইত্তেফাক।

শনিবার (২৮ জুন) সকালে পিআইবি আয়োজিত এক সেমিনারে মামুন অর রশীদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ (ইবিএলআইসিটি) প্রকল্পের পরামর্শক।

তার গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমর সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি-প্রকৃতি’।

এতে জানানো হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতেও ভুয়া সংবাদের প্রবণতা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বস্তুনিষ্ঠতা নয়, বরং ভাইরাল হওয়ার লোভেই সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে।

গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংবাদ প্রত্যাহার করতে হয়েছে প্রথম আলোকে। দ্বিতীয় দৈনিক কালবেলা এবং তৃতীয় অবস্থানে দৈনিক ইত্তেফাক। অন্য গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে দৈনিক যুগান্তর, ডেইলি স্টার, ঢাকা পোস্ট, বাংলা ট্রিবিউন, বিডিনিউজ, দৈনিক কালের কণ্ঠ, যমুনা টিভি, বিবিসি বাংলা, চ্যানেল২৪বিডি, সময় নিউজ, জাগো নিউজ২৪, বাংলানিউজ২৪, দৈনিক জনকণ্ঠ, ঢাকা ট্রিবিউন, টিবিএস, দৈনিক দেশ রূপান্তর, দৈনিক ইনকিলাব, আইটিভি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি), সময়ের কণ্ঠস্বর, একাত্তর টিভি, এনটিভি ওয়েব, যায়যায়দিন, আমাদের সময়, সময়ের আলো, বিডি প্রতিদিন।

মামুন অর রশীদ বলেন, এটি আমার নিজস্ব গবেষণা কর্ম, গত জানুয়ারি থেকে চলতি জুন মাস নাগাদ গবেষণায় এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা কর্মটি জার্নালে প্রকাশের জন্য আরো তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে।

গবেষণায় ফ্যাক্ট-চেক সাইট থেকে নেয়া ছয় মাসের স্ক্র্যাপ ডেটা, মূলধারার গণমাধ্যমের ৬৯৪টি পৃথক ডেডলিংকসহ ৫টি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হতে পারে। এক দল কিংবা দলের প্রার্থী অপর দল কিংবা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অপতথ্য ছড়াতে পারে।

তিনি বলেন, বানোয়াট ও চাঞ্চল্যকর তথ্য মানুষ বেশি পছন্দ করে, ৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি অনেকটাই বেড়েছে।

ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সত্যের চেয়ে ভাইরাল হওয়ার দিকেই মনোযোগ বেশি। এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হয়। ভাইরাল নিউজের বাণিজ্যিক ও আর্থিক মূল্য আছে বলে সেটা করা হচ্ছে। এই চিন্তাধারা থেকে বের হওয়া না গেলে দেশের গণমাধ্যমগুলো বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। সংকটের মধ্যে পড়বে গোটা জাতি।

মূলধারার গণমাধ্যম বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে সে জায়গাটা নেবেন কনটেন্ট মেকার বা ব্লগাররা। তারা বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন। এ সংকট মোকাবিলায় গণমাধ্যম মালিক ও ম্যানেজমেন্টকে ডিজিটাল ভেরিফিকেশন এবং ফ্যাক্ট চেকিংয়ে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ (ইবিএলআইসিটি) প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশীদ। প্রবন্ধের ওপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন পিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ।

এতে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ পত্রিকার চিফ রিপোর্টার বাছির জামাল, প্রথমা প্রকাশনার প্রধান সমন্বয়কারী মশিউল আলম, একাত্তর টিভির সিওও শফিক আহমেদ, যুগান্তরের নগর সম্পাদক মিজান মালিক, যমুনা টিভির মাহফুজ মিশু প্রমুখ।

সংবাদমাধ্যমে অপতথ্য মোকাবিলায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের বিষয়গুলোকে তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। সূচনা বক্তব্যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫ বছরের সাংবাদিকতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্র নিজে মিথ্যার কারখানায় পরিণত হয়েছিল এবং সংবাদমাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ফেরিওয়ালা।

গ্রেফতার, নির্যাতন, গুমের ঘটনা ঘটানোর জন্য শিকারি সাংবাদিকতা করা হয়েছিল এবং বিবিএস থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৫ বছরে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার ক্ষীণ ধারা ছিল বলে মনে করেন ফারুক ওয়াসিফ। তিনি বলেন, অপতথ্যকে শুধু ফ্যাক্টচেক দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এটাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।

#সংবাদপত্র #প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ