এপ্রিলের বেতনের প্রস্তাব পাঠাতে দেরি যে কারণে | এমপিও নিউজ

এপ্রিলের বেতনের প্রস্তাব পাঠাতে দেরি যে কারণে

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একজন কর্মকর্তা অসুস্থ হওয়ার জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তবে শিগগিরই এই প্রস্তাব পাঠানো হবে।

#বেতন #এমপিও #শিক্ষক

বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যায়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তবে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং শিক্ষকরা শীঘ্রই তাদের বেতন হাতে পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

সোমবার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, "বেতন নিয়ে যে প্রধান কর্মকর্তা কাজ করেন, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই কারণে বেতনের প্রস্তাব পাঠাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে আমরা দ্রুত প্রস্তাব পাঠানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আশা করছি শিক্ষকরা খুব শীঘ্রই তাদের এপ্রিল মাসের বেতন হাতে পাবেন। "

অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তারাও একই ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন। তারা মনে করছেন, অসুস্থ কর্মকর্তা কিছুটা সুস্থ বোধ করলেই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হবে। এই অপ্রত্যাশিত বিলম্বের কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি হলেও, অধিদপ্তর আশাবাদী যে খুব বেশি সময়ক্ষেপণ হবে না।

দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতন-ভাতা বিতরণের পদ্ধতি নিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হতেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি)-এর মাধ্যমে সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতা পেলেও, বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি ছিল ভিন্ন।

তাদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় করা হতো। এর ফলে শিক্ষকদের বেতন তোলার জন্য ব্যাংকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো এবং বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হতো।

এই প্রেক্ষাপটে, গত বছরের ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে প্রদানের একটি যুগান্তকারী ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

প্রাথমিকভাবে, একটি পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটির মাধ্যমে ছাড় করা হয়েছিল।

এই সফল প্রয়োগের পর, গত ১ জানুয়ারি তারিখে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটির মাধ্যমে তাদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেয়েছেন। এটি ছিল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি।

পরবর্তীতে, এই প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০ এর অধিক শিক্ষক-কর্মচারী ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বেতন ইএফটির মাধ্যমেই গ্রহণ করেছেন।

এই ধারাবাহিকতায় এপ্রিল মাসের বেতনও ইএফটির মাধ্যমেই শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে, অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার অসুস্থতার কারণে প্রস্তাব পাঠানোয় বিলম্ব হওয়ায় শিক্ষকরা এখনো তাদের এপ্রিল মাসের বেতনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

শিক্ষা অধিদপ্তর এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য কাজ করছে।

মহাপরিচালকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আশা করা যাচ্ছে যে এই মাসের মধ্যেই শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতন হাতে পাবেন। ফলে তাদের মধ্যে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশমিত হবে।

ইএফটি ব্যবস্থার প্রবর্তনের ফলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা এবং দ্রুততা নিশ্চিত হয়েছে। এর আগে অ্যানালগ পদ্ধতিতে বেতন ছাড়ের কারণে অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দেখা যেত। শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন পেতেও বিলম্ব ঘটতো।

ইএফটি সেই সমস্যাগুলো দূর করতে সহায়ক হয়েছে।

এখন শিক্ষকরা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাওয়ায় হয়রানি কমেছে । তারা একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

তবে, এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব প্রেরণে অপ্রত্যাশিত বিলম্ব আবারও সেই পুরনো দিনের ভোগান্তির স্মৃতি কিছুটা হলেও শিক্ষকদের মনে ফিরিয়ে এনেছে। তারা আশা করছেন, অধিদপ্তর দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করবে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে নজর রাখবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইএফটি চালু করা তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

বর্তমানে, অধিদপ্তরের সকল স্তরের কর্মকর্তারা অসুস্থ কর্মকর্তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন।

একই সাথে এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব যাতে অনতিবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যায় সেই বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, খুব শীঘ্রই তারা তাদের প্রাপ্য বেতন হাতে পাবেন এবং স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ বজায় থাকবে।

উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়।

এই অর্থ এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) এর মাধ্যমে ছাড় করা হয়। প্রতি মাসে এই এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতনের জন্য অপেক্ষা করেন।

এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব প্রেরণে বিলম্ব হওয়ায় প্রায় পাঁচ লক্ষের অধিক শিক্ষক-কর্মচারী তাদের বেতন প্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তবে অধিদপ্তরের আশ্বাসে তারা শিগগিরই বেতন পাওয়ার আশা রাখছেন।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

 

#বেতন #এমপিও #শিক্ষক