প্রবাদ আছে, জোর যার মুল্লুক তার। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে এর প্রভাব অহরহ দেখা যায়। আমাদের দেশের সকল আন্দোলন তখনই সফলতা অর্জন করে যখন ছাত্র যুবক সমাজ শক্তি প্রয়োগ করে। জোর বা শক্তি ছাড়া সাধারণত রাষ্ট্র বা সরকার থেকে অধিকার আদায় করা যায়না।
আমাদের সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত হলো বৃদ্ধ শিশু ও পেশাজীবীদের মধ্যে শিক্ষক। তাদের অধিকার পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। শিশু ও শিক্ষকদের কিছুটা হলেও অভিভাবক আছে। শক্তি কম থাকায় তারা অধিকার আদায় করতে পারেনা। কিন্তু প্রবীণদের অভিভাবক নেই। তারা নিজেরাই পরিবার সমাজের শক্তিহীন অভিভাবক। যার ফলে প্রবীণরা তাদের অধিকার আদায় করতে পারেনা।
কোটা আন্দোলনের ছাত্ররা বৈষম্য দূর করতে যেয়ে শক্তির জোরে আজ রাষ্ট্রীয় মসনদে আসীন। অথচ প্রবীণদের যানবাহন, চিকিৎসার জন্য যুবক - যুবতীর সঙ্গে একই লাইনে ক্লান্ত ও অবসন্ন দেহে দাঁড়াতে হয়। যানবাহনে ও চিকিৎসায় শিশু, মহিলা, প্রতিবন্ধী আলাদাভাবে সুযোগ আছে। একমাত্র মরণ পথের যাত্রী প্রবীণদের সে সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা দুজনই প্রবীণ।
অথচ তাদের শারীরিক মানসিক ও আর্থিক শক্তি যুবকদের চেয়েও অনেক বেশি। তাদের ভাবনা পেনশনভোগীরাও আমাদের মতো শক্তি সামর্থ্যের অধিকারী। এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাজেটে পেনশনভোগীরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্য তথা অবহেলিত। সরকারের বিশেষ প্রণোদনার সর্বনিম্ন স্তর হলো ১ হাজার ৫০০টাকা।
পেনশনভোগীদের হলো ৭৫০ টাকা। তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারীদের বাজেটে প্রণোদনা ১৫ শতাংশ অথচ পেনশনভোগী তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারীদের ১৭ হাজার ৩৮৮ টাকার ওপর ১০ শতাংশ। পেনশনভোগীরা কর্মরত কর্মচারীদের মতো ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ৬৫ বছরের ঊর্ধে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাবে।
মৃত্যুপথ যাত্রীরা কেন এ সামান্য চিকিৎসা ভাতা পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে অবহেলায় কষ্টে কবরে যাবে। প্রবীণদের শ্রম ও কষ্টে অর্জিত এ দেশ ও স্বাধীনতা। অথচ তারা পড়ন্ত বেলায় একটু সুখ-শান্তি ভোগ করে মরতে পারবেনা।
শতভাগ পেনশন যারা নিয়ে গেছেন তারা শুধু ২ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। তাদের এ বিশেষ প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত করা কাম্য নয়। প্রবীণদের সম্মান অধিকার আদায়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। তারা দেশ ও জাতির সম্পদ। তাদের মর্যাদা তথা অধিকারের প্রতি পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি জাগ্রত হোক। এ কামনা করছি।
লেখক: প্রবীণ শিক্ষক নেতা