ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন এক বিপজ্জনক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে—বিশেষ করে তাদের হাতে, যারা মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এখনও পরিপক্ক নয়।
এই প্রযুক্তিগত শক্তি যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে, তেমনি ভুল হাতে পড়লে তা সমাজে হিংসা, ঘৃণা ও চরমপন্থার বিষ ছড়াতে পারে।’
শুক্রবার (২ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির এক পোস্টে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন এসব কথা লিখেছেন।
তিনি বলেছেন, আজকের দিনে ইন্টারনেট, ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। এই উন্মুক্ততাই একটি শক্তি—মত প্রকাশের শক্তি, লেখার শক্তি, তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার শক্তি।
যে কেউ যেকোনো কিছু প্রকাশ করতে পারে, আবার অন্য কেউ তা পড়তেও পারে। কিন্তু তাই বলে সবাই সবকিছু পড়ে বুঝতে বা ধারণ করতে পারে এমন নয়।
খালিল জিবরান বলেছেন ‘তুমি যতো বেশি দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে যাবে, সুখ ধারণ করার পাত্র ততো বড় হবে।’ নিজের মতের সাথে না মিললেই যে কেউ যে কারো ওয়ালে গিয়ে গালাগালপূর্ণ মন্তব্য করে ফেলে।
আবার নিজের মতের সাথে মিললেই আপন মনে করে একদম ভেড়া হয়ে যায়।
অন্যের ওয়ালে মন্তব্য করতে পারা এবং অন্যের ওয়ালে যাওয়া মানে আপনি সেই মানুষটির অতিথি। অতিথি হয়ে হোস্টকে গালমন্দ করে মন্তব্য করা যায় না, এই সামান্য ভদ্রতাবোধটুকুও নাই।
সম্মানের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারতেও জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাগে। আমাদের সমাজের গড় প্রজ্ঞার মান দিনদিন নিচে থেকে নিচে নামছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন এক বিপজ্জনক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে—বিশেষ করে তাদের হাতে, যারা মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এখনও পরিপক্ক নয়।এই প্রযুক্তিগত শক্তি যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে, তেমনি ভুল হাতে পড়লে তা সমাজে হিংসা, ঘৃণা ও চরমপন্থার বিষ ছড়াতে পারে।
আজকের বাস্তবতায়, আমরা দেখছি—মানুষ দিন দিন আরও বেশি অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা দার্শনিক চিন্তাধারার পার্থক্য—কোনোটাই সহ্য করতে পারছে না একটি বড় অংশের মানুষ।
এই অসহিষ্ণুতার মূল শেকড় লুকিয়ে আছে এক ধরনের গোঁড়ামিতে—যাকে সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায় ডগম্যাটিক মাইন্ডসেট।
এটি এমন এক মানসিকতা, যা নিজের বিশ্বাসকে একমাত্র সত্য মনে করে, পরিবর্তনকে ভয় পায় এবং যে কোনো ভিন্নমতকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে।
ফলে সমাজে যুক্তিবোধের চর্চা নয়, বরং আবেগ, বিভাজন ও অন্ধ আনুগত্য ক্রমেই প্রবল হয়ে ওঠে। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করতে শেখানো হয় না, বরং তা দমন করাকে দেখা হয় ‘সততা’র নিদর্শন হিসেবে।এর ফলে একটি গণতান্ত্রিক, মুক্ত ও যুক্তিনির্ভর সমাজের স্বপ্ন দিন দিন অস্পষ্ট হয়ে পড়ছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে সমাজ ক্রমেই আরও প্রতিক্রিয়াশীল, সহিংস ও অন্ধ হয়ে উঠবে—যেখানে মেধা, যুক্তি ও সংলাপের কোনো স্থান থাকবে না