ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদের (২৭) ঝুলন্ত মরদেহ মঙ্গলবার (১০ জুন) মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ জামশা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
নিহত শাকিল আহমেদ ঢাবির চারুকলা অনুষদের ২০১৮-১৯ সেশনের ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি উপজেলার দক্ষিণ জামশা গ্রামের নাসিরুদ্দিন আহমেদের ছেলে। তার মৃত্যুর পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা ফেসবুক পোস্টে জানান, মবের হুমকিতেই শাকিল আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। শাকিল আহমেদের পরিবারকে প্রকাশ্যে মাঠে এনে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় চরম শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। শাকিলের বাবা নাসির উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, ষড়যন্ত্র করে মানসিক চাপে ফেলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। ওকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে ন্যায়বিচার চাই।
তিনি আরও জানান, শাকিল মাস্টার্স শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং সম্প্রতি বলেছিলেন, আব্বা, আর পাঁচ মাস। মাস্টার্স শেষ করলেই চাকরি পাব। তোমার টাকাপয়সা লাগবে না।
কণ্ঠে কান্না চাপা দিতে না পেরে নাসির উদ্দিন বলেন, ছোটবেলা থেকে ও পড়ালেখায় ভালো ছিল। অনেক কষ্ট করে ওকে এই পর্যন্ত আনছি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে ফেসবুকে একটি ধর্মীয় বিষয়ে ভুল মন্তব্য করেছিলেন শাকিল, যা পরে তিনি মুছে ফেলেন ও অনুতপ্ত হন। কিন্তু গত সোমবার সেই মন্তব্যের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাতে স্থানীয় কিছু লোকজন বাড়িতে গিয়ে শাকিল ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়।
কারা হুমকি দিয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে শাকিলের বাবা বলেন, রাতে অনেক লোক এসেছিল, কে কে ছিল, ভালো করে চিনতে পারিনি। শুধু বলছিল, শাকিলকে শাস্তি দিতে হবে, ওকে হাজির করতে হবে। পরে মোবাইলে শাকিলকে বলা হয়, বাজারে না এলে গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে পাথর মেরে মারব। এই সব শুনেই সে ভেঙে পড়ে।
শাকিল তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন। বড় দুই ভাই প্রবাসে থাকেন। কৃষিকাজ করে আয় করা অর্থ দিয়েই সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছিলেন পিতা।
মানিকগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সিংগাইর সার্কেল) ফাহিম আসজাদ বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ পাই, তাহলে সে ক্ষেত্রে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।