কামরুল হাসান মামুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট দেখা যাবে—প্রায় কেউই কেবলমাত্র একটি সরকারি বেতনের ওপর নির্ভর করে জীবন-যাপন করতে পারেন না।
কেউ ঘুষ গ্রহণ করেন, কেউ বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান, কেউ বা খণ্ডকালীন অন্য চাকরি করেন।
অর্থাৎ রাষ্ট্র এমন একটি বেতন কাঠামো দাঁড় করিয়েছে, যা একজন সৎ মানুষকে সৎভাবে বাঁচতে দেয় না।
সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক মামুন বলেন, একজন অফিসের পিয়নও আজ “উপরি আয়” বা বকশিশের আশায় থাকেন, আশা করেন বড়কর্তার অনুকম্পা যদি কিছু বাড়তি এনে দেয়।
এমনকি একটি মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষীও—যদিও পার্কিং ফ্রি—গাড়ির দরজা খুলে বিনয়ের সঙ্গে সালাম দিয়ে তাকান, যেনো বকশিশ চাওয়াটা তার প্রাপ্য।
এই ‘অতিরিক্ত আয়ের’ মানসিকতা আজ সমাজের প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে প্রোথিত। যখন প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে নিজের বেতনের বাইরে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পথ খুঁজে নেয়, তখন এটা আর ব্যক্তি বিচ্যুতি নয়—বরং এটি একটি কাঠামোগত ব্যর্থতা।
অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, ভাবুন, এই দেশে কতো কোটি মানুষ এইভাবে অনৈতিক অর্থনৈতিক অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েছে—এবং তার মূল কারণ, একটি অযোগ্য, অসম, চরম বৈষম্যপূর্ণ এবং বাস্তবতাবিবর্জিত বেতন কাঠামো।
সরকার যদি কর্মচারীদের এমন বেতন দেয়, যাতে তারা মর্যাদার সঙ্গে জীবন-যাপন করতে পারেন, তবে দুর্নীতির প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পেতো।
রাষ্ট্রের উচিত এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করা। যেনো ঘুষ না দিয়ে কাজ করানো যায় সেই ব্যবস্থা করা। যেনো সবাই আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।
ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, আমরা যে ব্যাপক এবং সর্বগ্রাসী ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক আয়ের’ সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করছি, তা একটি ভয়াবহ বাস্তবতাকে অস্বীকার করার নামান্তর।
আর এর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক পরিণতি—আমরা ইতোমধ্যেই ভোগ করছি। এটি এক নিঃশব্দ সংকট। এবং এটি মোকাবিলা করা এখনই সময়ের দাবি।