দ্বিগুণ হচ্ছে উপবৃত্তি, দেওয়া হবে পোশাক কেনার টাকা | স্কুল নিউজ

দ্বিগুণ হচ্ছে উপবৃত্তি, দেওয়া হবে পোশাক কেনার টাকা

মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় না করায় প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকার মূল্যমান তলানিতে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে উপবৃত্তির টাকা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এছাড়া পোশাক কেনার জন্য দেওয়া হবে দুই হাজার টাকা।

#স্কুল #শিক্ষার্থী #শিক্ষক

প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ও মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিয়ে থাকে সরকার। বর্তমানে উপবৃত্তির আওতায় প্রায় ৮৬ লাখ শিক্ষার্থী। মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় না করায় প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকার মূল্যমান তলানিতে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে উপবৃত্তির টাকা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এছাড়া পোশাক কেনার জন্য দেওয়া হবে দুই হাজার টাকা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন হারে উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে। নতুন প্রস্তাবনায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে প্রাথমিকের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমান হারে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

পরিবার থেকে দুজনের বেশি উপবৃত্তি না পাওয়ার নিয়মটা না রাখলে ভালো হবে। সেজন্য অধিদপ্তর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দুই সন্তানের বেশি, এমন পরিবারের কোনো সন্তান স্কুলবিমুখ হবে না।– শিক্ষা অধিদপ্তরের উপবৃত্তি শাখার সহকারী পরিচালক মো. কবির উদ্দীন

অধিদপ্তরের উপবৃত্তি শাখার তথ্যমতে, বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিকের একজন শিক্ষার্থী মাসিক ৭৫ টাকা হারে উপবৃত্তির টাকা পায়। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং যেসব স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চালু রয়েছে, সেখানে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টমের শিক্ষার্থীরা ২০০ টাকা হারে মাসিক উপবৃত্তি পায়। বছরে দুবার (ছয়মাস পরপর) মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের মাধ্যমে এ উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়।

উপবৃত্তি শাখার কর্মকর্তা (শিক্ষা অফিসার) মো. জিয়াউল কবির সুমন বলেন, নতুন প্রস্তাবে সবার জন্য সমান হারে উপবৃত্তি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাসিক ৩শ টাকা হারে (ছয় মাসে ১৮শ টাকা) উপবৃত্তির টাকা পাবে। যেসব স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চালু রয়েছে; সেখানে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টমের শিক্ষার্থীরাও মাসিক ৩শ টাকা হারে উপবৃত্তি পাবে।

যদি এ প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে আসে, তাহলে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের দ্বিতীয় ধাপে (জানুয়ারি-জুন) বাড়তি হারে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হতে পারে বলেও জানান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী— একটি পরিবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সর্বোচ্চ দুজন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে। অর্থাৎ, কারও দুটি সন্তানের বেশি থাকলে, তৃতীয় সন্তান আর উপবৃত্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হচ্ছে না। এতে অনেকে স্কুলবিমুখ হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ নিয়মে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী—একটি পরিবার থেকে যতজন শিক্ষার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, ততজনকেই সমপরিমাণে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হবে। ক্লাসে অনুপস্থিত বা নিয়ম অনুযায়ী ফলাফল না করলেই কেবল কারও উপবৃত্তি স্থগিত রাখা যাবে। এর বাইরে অন্য কোনো কারণে কেউ যাতে উপবৃত্তিবঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

অধিদপ্তরের উপবৃত্তি শাখার সহকারী পরিচালক মো. কবির উদ্দীন বলেন, পরিবার থেকে দুজনের বেশি উপবৃত্তি না পাওয়ার নিয়মটা না রাখলে ভালো হবে। সেজন্য অধিদপ্তর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দুই সন্তানের বেশি, এমন পরিবারের কোনো সন্তান স্কুলবিমুখ হবে না।

প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০১৯ অনুযায়ী- বছরে একবার শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক কেনার জন্য এককালীন টাকা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেখানে ২.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক-পরিচ্ছদ ক্রয় উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হবে। নির্দেশিকা জারির পর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে শিক্ষার্থীদের এক হাজার টাকা করে এককালীন উপবৃত্তি দেওয়া হয়েছিল। এরপর অবশ্য আর দেওয়া হয়নি।

শিক্ষা উপকরণের যে দাম বেড়েছে, সার্বিকভাবে বাজারের যে পরিস্থিতি, তাতে প্রাথমিকের যে কোনো শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি মাসিক ৫শ টাকা করা উচিত। এটা ন্যূনতম। মানে ছয়মাস পরপর যখন উপবৃত্তিটা শিক্ষার্থী পাবে, তখন তার হাতে অন্তত তিন হাজার টাকা যাওয়া উচিত।- গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নির্দেশিকা মেনে শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক কিনতে এককালীন এক হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রকল্পটি আবারও চালুর অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক অবস্থান নিলে এবং অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিলে শিক্ষার্থীরা আবারও বছরের শুরুতে এককালীন এ টাকা পাবেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত এবং কতজন উপবৃত্তি পাওয়ার যোগ্য, সেই তথ্য আইবাস প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। সেই তথ্যের ভিত্তিতে অধিদপ্তর উপবৃত্তির প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আসছে। আমরা শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়াতে চাই। শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে চাই। প্রাথমিক স্তরে তাদের শক্ত ভিত তৈরি করে দিতে চাই। সেজন্য উপবৃত্তির টাকার পরিমাণটা বাড়ানো নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি শিগগির সেটা সম্ভব হবে।- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

অধিদপ্তরের কাছে সবশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তথ্য এসেছে, তাতে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি তিন লাখের কিছু বেশি। তাদের মধ্যে উপবৃত্তির চাহিদা রয়েছে ৯৩ লাখ শিক্ষার্থীর। যদিও নানান কারণে এর মধ্যে থেকে অনেকে বাদ পড়তে পারে।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি অর্থবছর দুই ধাপে (ছয়মাস পরপর) উপবৃত্তির টাকা পরিশোধ করা হয়। জুলাই-ডিসেম্বর প্রথম ধাপ এবং জানুয়ারি-জুন দ্বিতীয় ধাপ। সবশেষ জানুয়ারিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ধাপের উপবৃত্তি পরিশোধ করা হয়। তাতে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ৭১৪ কোটি টাকা। এ ধাপে উপবৃত্তির টাকা পেয়েছে ৮৬ লাখের কিছু বেশি শিক্ষার্থী।

#স্কুল #শিক্ষার্থী #শিক্ষক