রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সহযোগী অধ্যাপক তানজিউল ইসলাম জীবনের কণ্ঠসদৃশ তিনটি ‘আপত্তিকর’ কথপোকথন নিয়ে তোলপার চলছে। অভিযোগ উঠেছে এই শিক্ষক নির্ধারিত কোনো কিছুর বিনিময়ে এক ছাত্রীর সিজিপিএ বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ-কেউ বলছেন কথপোকথনে যেসব বিষয় ইঙ্গিত করেছেন ওই শিক্ষক, তা অনৈতিক। তবে এই অডিয়ো শিক্ষক তানজিউলের কিনা তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
গতকাল রোববার (১৩ এপ্রিল) রাতে ‘বেরোবিতে এসে যা যা দেখেছি’ নামক ফেসবুকের একটি প্রাইভেট গ্রুপে সাদিয়া সুভা নামক একটি আইডি থেকে পরপর তিনটি অডিয়ো কল রেকর্ড পোস্ট করা হয়। এতে ওই শিক্ষকের কণ্ঠসদৃশ এক ব্যক্তি তার এক ছাত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছুর বিনিময়ে তার ফাইনাল পরীক্ষার ভালো ফল বা সিজিপিএ বাড়িয়ে দেয়ার কথা শোনা গেছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরো বাড়িয়ে দেবেন বলে শোনা যায়।
জানা গেছে, এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি সংগঠন নীল দলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় এ শিক্ষককে বিতর্কের মুখে ইউজিসির নিয়ম লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করা হয়।
অডিয়োগুলোর প্রথমটিতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শুনো যায় ‘কোন সাংবাদিক যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করে, আপনার রেজাল্ট এত ভালো হয়ে গেলো কেনো? আপনার রেজাল্ট তো অনার্সে ৩ দশমিক ১৬ হঠাৎ মাস্টার্সে ৩ দশমিক ৭০ হলো? কী উত্তর দিবা? উত্তরে ওই ছাত্রী বলেন, স্যার বলবো যে তখন আমি গ্রামীণ ফোনে জব করতাম এজন্য আমি পড়াশোনায় সময় দিতে পারিনি, এবার আমি চেষ্টা করেছি এজন্য হয়েছে।
এছাড়া তৃতীয় আরেকটি ৬ মিনি ৫০ সেকেন্ডের অডিয়েতে শোনা যায়, শিক্ষক বলছেন, রেজাল্ট পাইছো? শিক্ষার্থী বলেন, জি স্যার। শিক্ষক বলেন, ঠিক আছে তো সব? ছাত্রী ওই শিক্ষককে ধন্যবাদ জানায়। শিক্ষক বলেন, আরো ভালো হইতো কিন্তু ওই যে বলি.... শিক্ষার্থী বলেন, কেনো আমি কী করলাম, জবাবে শিক্ষক বলেন, কী করছো সেটা তো আমি বলবো না। একবারে টপ করে দিতে পারতাম। কিন্তু তুমি তো মানে.... শিক্ষার্থী বলেন, স্যার সময়তো চলে যায় নাই, শিক্ষক বলেন প্রথম থেকেই তো এ কথাই বলছো ....। এ সময় শিক্ষক আরো বলেন একটা সেমিস্টার আছে তোমার ডিসিশন তোমার ইয়ে হবে আর কিছু বলবো না। তোমার অ্যাক্টিভিটিজের ওপরেই তোমার সামনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, এখন বুঝে নাও কী করবা? রেজাল্ট আরো ভালো হইতো, কাকে বলি নাই? রেজোয়ান কে বলছি, শরিফুলকে বলছি, নাজমা কে বলছি, আরিফাকে বলছি, কৌশলগত কারণে আমি নিজেই একটু কম দিছি।
তবে এ বিষয়ে ওই শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক তানজিউল ইসলাম জীবন বলেন, এসব এআই দিয়ে বানানো। এগুলো সঠিক না।
এ ঘটনায় শিক্ষক ড. তানজিউল ইসলাম জীবন রংপুরের তাজহাট থানায় একটি সধারণ ডায়েরি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাকে নিয়ে ফেসবুকে সাদিয়া সুভা আইডি থেকে কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। আমার নামে মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচারসহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। চেষ্টা করেও অপপ্রচারকারীর পরিচয় শনাক্ত করতে ব্যর্থ হই। সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত না থাকায় বিষয়টি আপাতত সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে রাখা প্রয়োজন।’