সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাই দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষাব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছে সরকার। কিন্তু রাজধানী ডেমরা থানার বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে আইসিটি ক্লাস চলছে নামমাত্রে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
এতে প্রকৃত আইসিটি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা বলে জানান তারা। পাশাপাশি নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস না হওয়ায় রাজধানীর মূল অংশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে ডেমরা অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বলে মনে করেন অভিভাবকরা।
এবিষয়ে জানতে ডেমরা শিক্ষা থানা অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, এ বিষয়ে আমাদের জোর তদারকি রয়েছে। সাময়িক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও শিগগিরই সব সমস্যা কেটে যাবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ওয়েবভিত্তিক এ ক্লাস চালু রাখা হবে।
সূত্র জানায়, ডেমরা শিক্ষা থানায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্তসহ ৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থী রয়েছে লক্ষাধিক। বর্তমানে বাংলাদেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়টি বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আবশ্যিক হিসেবে ১০০ নম্বরের এ বিষয়টি সংযোজিত হয়েছে। প্রথমে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০০ নম্বর হলেও বর্তমানে ৫০ নম্বরের এ বিষয়টি অবহেলার মধ্যে রয়েছে। তবে এ নিয়ম প্রবর্তিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পদ্ধতিতেও নানা পরিবর্তন আসার কথা। এতে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হলেও ডেমরা শিক্ষা থানায় তা অনেকাংশেই কম। আর এ শিক্ষা পদ্ধতি ব্যাপকভাবে প্রচলন না হওয়ায় এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে বিষয়টি একটু জটিলই রয়ে গেছে। তবে মূল পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সহায়ক বই ছাড়াও ডিজিটাল পদ্ধতিতে আকর্ষণীয়ভাবে শেখার জন্য অডিও, ভিডিও ও অ্যানিমেশনসমৃদ্ধ মাল্টিমিডিয়া সংশ্লিষ্ট উপকরণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি বিতরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ইন্টারনেটের সুব্যবস্থা থাকায় ওয়েবভিত্তিক শিক্ষার জন্য আইসিটি শিক্ষা নামে একটি সাইট তৈরি করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আইসিটি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত যে কোনো বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবেন। তাছাড়া এ সাইটে প্রয়োজনীয় ভিডিও টিউটোরিয়াল, সফটওয়্যার ও প্রশ্নব্যাংক ছাড়াও অনেক বিষয় দেওয়া হয়েছে। এ ওয়েবসাইটের সহায়তায় আইসিটি শিক্ষকরা নিজেদের মতো ওয়েবসাইট তৈরি করে আপলোড করতে পারেন। এছাড়া আইসিটি ওয়েবসাইটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে আরও অনেক শিক্ষা সুবিধা রয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় আইসিটি শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। আর সুবিধাবঞ্চিতরা রয়ে যাচ্ছে একেবারেই অদক্ষ।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মন্ত্রণালয় থেকে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষা সহায়ক একটি করে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডেমরা শিক্ষা থানায় ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ‘কইকা’ নামে কোরিয়ান একটি প্রজেক্ট এখানকার বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি ও মাল্টিমিডিয়া শিক্ষাসহায়ক উপকরণ প্রদান করে। কিন্তু একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় সেসব উপকরণ যথেষ্ট নয়। নেই পর্যাপ্ত আইসিটি শিক্ষক। তবে বড় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে আইসিটি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। তারা পার্টটাইম মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেন বলে জানা গেছে।
তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষক সংকট বিষয়ে ডেমরা শিক্ষা থানা অফিসার (মাধ্যমিক) হারুন-অর- রশীদ জানান, বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আইসিটি বিষয়ে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। বর্তমানে ডেমরা শিক্ষা থানায় মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়গুলোয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিয়মিত নেওয়া হচ্ছে। যেখানে সমস্যা রয়েছে, সেখানে আমাদের মনিটরিং চলছে।
তাছাড়া শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশে আইসিটি শিক্ষাব্যবস্থার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে আইসিটি শিক্ষাকে আরও সফল করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।