সারাদেশে সব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। কঠোর এই নির্দেশনার পরও রংপুরের বদরগঞ্জের ঘাটাবিল শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ঘেঁষে প্রধান শিক্ষকের অবৈধ দুটি ইটভাটা বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘাটাবিল শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ঘেঁষে আরবিবি-১ ব্রিকস ও আরবিবি-২ ব্রিকস নামে দুটি অবৈধ ভাটা রয়েছে। দুটি ইটভাটার মালিক ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী। তিনি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং বদরগঞ্জ উপজেলা ভাটামালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। পাশে সিবিএল ব্রিকস নামে আরও একটি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। সেটির মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টুটুল চৌধুরী। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গা ঢাকা দেন টুটুল চৌধুরী। এখন ওই ইটভাটা তার এক চাচা চালাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি ইটভাটায় কাঁচা ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার চিমনির বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার ঝাঁজালো গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন এলাকার মানুষ।
ওই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন রহস্যজনক কারণে তার দুটি ইটভাটা বন্ধ করতে পারছে না। আমরা শিক্ষক হয়েও প্রতিবাদ করতে পারি না। কারণ ভাটামালিক শাহজাহান আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আমরা স্কুলে থাকলে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারি না। স্কুলের প্রায় শিক্ষার্থীই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
দেড় মাস আগে রংপুর পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগিতায় শাহজাহান আলীর আরবিবি-১ ব্রিকস ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা. মলিহা খানম ওই ভাটামালিক শাহজাহান আলীকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে এক মাসের মধ্যে ভাটা বন্ধের নির্দেশনা দেন; কিন্তু তা আজও বন্ধ হয়নি।
জানতে চাইলে শাহজাহান আলী বলেন, আমার হাইকোর্টের রিট আছে। মেয়াদ থাকা পর্যন্ত প্রশাসন আমার ইটভাটা দুটি বন্ধ করে দিতে পারবে না।
রংপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কমল কুমার বর্মণ বলেন, শাহজাহানের দুটি ইটভাটাসহ তিন ইটভাটা অবৈধ। আমরা দেড় মাস আগে তার একটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এক মাসের মধ্যে ওই ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জনবল না থাকায় এক ইটভাটায় একবারের বেশি যাওয়া সম্ভব হয় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমানের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছা. মলিহা খানম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে ইতিমধ্যে আমরা আরএএমবি ব্রিকস ও জেডএমবি ব্রিকস ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি।
রোববার কে আর এম ব্রিকস ও একতা ব্রিকস নামে দুটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু হাইকোর্টের রিট থাকায় তা বন্ধ করতে পারিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ওই স্কুল ঘেঁষে তিনটি ইটভাটাও বন্ধ করে দেওয়া হবে।