ডিজিটাল যুগে পুরনো প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তিতে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির মুখে পড়ছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক পর্যায়ে অনলাইনে ফি জমাদানসহ প্রক্রিয়াগুলো ডিজিটাইজড হলেও মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া আদি যুগের মতো দীর্ঘ ও কাগজপত্রভিত্তিক থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
মাস্টার্সে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের কয়েক ধাপ পেরোতে হয়। প্রথমে কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসের ওয়েবসাইটে অনলাইনে ফরম পূরণ করে ফি জমা দিতে হয়, যা অনলাইন অথবা ব্যাংকে দেওয়া যায়।এরপর নিজ নিজ বিভাগ থেকে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে হয়। এই ফরম পূরণের জন্য বিভাগ থেকে একটি রসিদ দেওয়া হয়, যেটি ব্যাংকে জমা দিতে হয়; অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার সুযোগ নেই।
২১ ধরনের তথ্য সংবলিত ফরমটি শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পূরণ করতে হয়, যেখানে ছবিও আঠা দিয়ে লাগাতে হয়। সঙ্গে দিতে হয় অভিভাবকের আয়ের সনদপত্র, পূর্ববর্তী পরীক্ষার সত্যায়িত নম্বরপত্র ও ব্যাংকের রসিদ। বিভাগে জমা দিয়ে চেয়ারম্যানের সুপারিশ নেওয়া হয়।
চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের পর ফরম ফেরত নিয়ে আবার হলে গিয়ে নতুন একটি ফরম পূরণ করতে হয়, যা সত্যায়িত কপি, আয়ের সনদসহ হল অফিসে জমা দিতে হয়। এখানে ব্যাংকে ফি জমা দেওয়ার ব্যবস্থা অনলাইনে নেই, লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকে যেতে হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত জটিল ও কাগজপত্রভিত্তিক প্রক্রিয়ায় মাস্টার্সে ভর্তি হতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর। তারা আশা করছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল হলে ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।
অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী জাওয়াদ হোসেন আবির বলেন, আয়ের সনদ ও এসএসসি-এইচএসসির মার্কশিটের সত্যায়িত কপির জন্য অনেককে উপজেলা পর্যন্ত যেতে হয়। অনেকের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এই প্রক্রিয়া খুবই সমস্যাজনক। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখনো এই ‘আদি যুগের’ ব্যবস্থায় ভর্তিপ্রক্রিয়া চলছে।
স্যার এ এফ রহমান হলের সাদ আহমেদ বলেন, মাস্টার্স ভর্তি পদ্ধতিতে অনলাইন-অফলাইন মিশ্রণ অনেক সমস্যা তৈরি করে। আবার ছবি নিয়ে আঠা দিয়ে ফরমে লাগানো থেকে শুরু করে অভিভাবকের আয়ের সনদপত্র নিতে উপজেলায় যেতে হয়, যা সময় ও শ্রমের অপচয়।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের রাফিউজ্জামান লাবীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কার্যক্রম ডিজিটাইজড হলেও ভর্তিপ্রক্রিয়া অর্ধেক ম্যানুয়াল। একাধিকবার বিভাগ, হল ও ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এ ছাড়া আয়ের সনদ জমা দেওয়ার জন্য বিকল্প পদ্ধতি প্রবর্তন জরুরি।
এর আগে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া অধিক জটিল ছিল। নতুন শিক্ষার্থীদের তিন-চার দিন ধরে বিভাগ, ব্যাংক ও ইনস্টিটিউটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। তবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সভায় স্নাতক পর্যায়ের ভর্তিপ্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অথবা নিজ নিজ বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল অফিসে ফি ও জামানত জমা দিতে পারবেন। তাতে স্নাতক ভর্তিপ্রক্রিয়া অনেক সহজ হবে।
মাস্টার্স ভর্তিপ্রক্রিয়া ডিজিটাল করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আমরা ভর্তিপ্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় অটোমেশন ধাপে ধাপে শুরু করেছি। বর্তমানে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে তা চালু করা হয়েছে। মাস্টার্স পর্যায়েও এ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। তাতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেক কমবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবাগুলো ধীরে ধীরে অটোমেশন করা হবে।