কঠিন পরিস্থিতিতে পরীক্ষাগ্রহণ ও ফল প্রকাশ | শিক্ষাবিদের কলাম নিউজ

কঠিন পরিস্থিতিতে পরীক্ষাগ্রহণ ও ফল প্রকাশ

মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৬৮.০৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পাসের হার যশোর শিক্ষাবোর্ডে ৭৩.৬৯ শতাংশ আর সবচেয়ে কম বারিশাল বোর্ডে ৫৬.৩৮ শতাংশ।

#এসএসসি #এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা #এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল #এসএসসি ভোকেশনাল

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো। এতে দেখা যায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫শতাংশ, গতবার এই হার ছিলো ৮৩ দশমিক ০৩ শতাংশ। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী, এবার সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জনে। এসএসসি ভোকেশনালে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৬৮.০৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পাসের হার যশোর শিক্ষাবোর্ডে ৭৩.৬৯ শতাংশ আর সবচেয়ে কম বারিশাল বোর্ডে ৫৬.৩৮ শতাংশ। এর ব্যাখ্যাও আজ পর্যন্ত পেলাম না। প্রতিবছরই বোর্ডগুলোতে পাসের হারে ভিন্নতার কোনো যৌক্তিক কারণ বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা করতে পারেনা। এটির ব্যাখ্যা থাকা দরকার তা না হলে এই মূল্যায়নের গুরুত্ব কমে যায়। তুলনা করতে না পারলে এবং কমবেশি হওয়ার কারণে আবিস্কার করা ও ব্যাখ্যা করা না হলে এই ভিন্নতর ফল প্রকাশ করার অর্থ কি? তবে, প্রতিবছরের মতো মেয়েরা এগিয়ে আছে, এ ঘটনাটি গত কয়েকবছর যাবত প্রায়ই ঘটছে এবং এর কারণ হিসেবে আমরা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ একটু বেশি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ কম হওয়া বলে এ পর্যন্ত জানতে পেরেছি।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, দুই মাসেরও কম সময়েই কোনো বাহুল্য ছাড়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হচ্ছে। এবার অনাড়ম্বরভাবে ফল প্রকাশ হয়েছে। ফল হস্তান্তরেরর ক্ষেত্রে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। এর দুটো দিক রয়েছে। এসএসসি আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। এটি প্রকাশ হওয়ার সময় পূর্ববর্তী বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব বোর্ডের চেয়ারম্যানরা ফল হস্তান্তর করতেন এবং প্রধানমন্ত্রী দু-চারটে কথা বলে, শিক্ষার্থীদের কিছু উপদেশবাণী শুনিয়ে ফল প্রকাশ করতেন। এটি এক ধরনের ট্রাডিশন ছিলো।

এর একটি দিক হচ্ছে শিক্ষাবোর্ডগুলোর সবকিছু যেনো কেন্দ্রীভূত ছিলো। শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চেয়ারম্যানদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই বলে মনে হতো। তাদের যে স্বায়ত্ত্বশাসন বলতে একটি বিষয় ছিলো সেটি এই আনুষ্ঠানিকতায় চাপা পড়ে যেতো। তবে, এর উল্টোপিঠেও কথা আছে। যেহেতু পাবলিক পরীক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা তাই এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা এসএসসি পরীক্ষা ও এর গুরুত্ব অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।

যেমন গ্রেডিং সিস্টেমের আগে প্রতিটি বোর্ডে যখন শিক্ষার্থীদের একটি মেধাতালিকা থাকতো তার কিন্তু একটি আলাদা মূল্য ছিলো। যদিও সেটি সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নয়। শিক্ষার্থীরা যখন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকার করে তখন তাদের সাক্ষাৎকার নিতে অনেক সাংবাদিক হাজির হতেন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ হতো। তাতে মেধা তালিকায় স্থান করা শিক্ষার্থীরা যেমন অনাবিল আনন্দ পেতেন তেমনি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক সবাই সেই বিশাল আনন্দের অংশীদার হতেন। এটি ছিলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশাল এক ধরনের মোটিভেশন।

আর অন্যান্য শিক্ষার্থীরা, এক অজানা আনন্দে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতেন ঐ মেধা তালিকায় স্থান করাদের মতো হওয়ার জন্য কিংবা তাদের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য। যে প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ভাল ফল করতো সেগুলোকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অনুসরণ করতো। এটি জীবনে অনেক কাজে লাগে। এর অবশ্য উল্টো দিকটি ছিলো যারা মেধা তালিকায় স্থান করতে পারতেন না তারা একটু মনক্ষুণ্ন হতেন।

কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান মেধাতালিকায় স্থান করানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের এবং নামের জন্য কিছুট অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করতো। এভাবে প্রতিযোগিতাটি কিছুটা অসুস্থতার মধ্যে পড়ে যেতো। তারপরেও এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চেনা যেতো, তাদের র‌্যাঙ্কিং বোঝা যেতো, শিক্ষার্থীরা পড়াশুনায় বেশি উৎসাহিত হতেন। তাই, উপরোক্ত নেগেটিভ বিষয়গুলোকে মিনিমাইজ করে মেধা তালিকার মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা খারাপ ছিলো না।

এসএসসি পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফল পুরো বিষয়গুলো জাতীয় উৎসবের মতো ছিলো। কিন্তু গ্রেডিং সিস্টেম আসার পর শিক্ষার্থীদের কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের র‌্যাঙ্কিং বুঝা যায়না। কারণ একজন শিক্ষার্থীর ৮০ পাওয়া আর ৯৮ পাওয়া কিন্তু এক কথা নয়। এই অবস্থা শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহকে সীমিত করে ফেলে। গ্রেডিং আসায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, তাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং, লেখার দক্ষতা, কোনো বিষয়ের ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস করার ক্ষমতা এমনকি সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতাও কমে গেছে। এটি এক বিরাট ঘাটতি।

জাতীয় এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার গুরুত্বের চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র বিষয়ের ওপর বেশি জোর দেয়া হয় আমাদের ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় মেধা তালিকা তুলে দেখায়। দেখা যায়, এক ক্রিকেট কিংবা ফুটবল কিংবা সাঁতার প্রতিযোগিতা সেটি জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়েই হোক সেসব খেলার বর্ণণা পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের চেয়ে বহুগুণ বেশি গুরুত্ব পায়। সে খেলার বর্ণনা, আলোচনা, টকশো পাবলিক পরীক্ষার চেয়ে বহুগুণ বেশি আলোচিত হয়।

একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স বর্ণনা করতে করতে পত্রিকার পুরো কয়েকটা পৃষ্ঠা ভরে ফেলা হয়, প্রচারমাধ্যমে অনেক কথা হয় কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন নিয়ে সেই জাতীয় কোনো আলোচনার ধারে কাছেও কেউ থাকেনা। তারমানে বিষয়টি মূলহীন। তাই শিক্ষা উপদেষ্টা যখন বলেছেন যে, পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে আড়ম্বরবিহীন, সেটি অন্যঅর্থে গুরুত্ব কমানো মনে হচ্ছে। তবে, আগে যেভাবে ফল প্রকাশের সময় যত আড়ম্বরপূর্ণ হতো, মূল শিক্ষাদানে তার ধারে কাছেও যেতো না। সেটির কথাই হয়তো উপদেষ্টা বলেছেন। সেই অর্থে ঠিক আছে। তবে, দুইমাসের কম সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ অনেকটা তাড়াহুড়োই মনে হয়। আমাদের খাতা মূল্যায়নের যে পদ্ধতি সেটিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ফল নিজেদের মতো করে প্রকাশ করছে যা বোর্ডগুলোর স্বায়ত্ত্বশাসনের একেবারে প্রিলিমিনারী স্টেজ। তারপরেও অন্তত শুরুটা হোক, সেটি ভালো। পুনর্নিরীক্ষণের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। পুনর্নিরীক্ষণের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

কারণ প্রতিবছর অসংখ্য উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের জন্য দরখাস্ত জমা পড়ে। যাদের কারণে পুনর্নিরীক্ষণ ফল বিভ্রাট ধরা পড়ে পুনরায় ফল প্রকাশ করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে এই পুনর্নিরীক্ষণ এবং খাতা মূল্যায়নে অবহেলা দিন দিন বেড়েইে চলেছে। এখন বোর্ড বিষয়টিতে শক্ত হতে পারেনা কারণ শিক্ষকদের ওপরই নির্ভর করতে হয় বোর্ডকে। অনেক শিক্ষক বোর্ড পরীক্ষার খাতা মুল্যায়ন করতে চাননা। কারণ তাদের প্রাইভেটি টিউশনিতে প্রচুর উপার্জন। সেই তুলনায় বোর্ড পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে পাওয়া অর্থ নস্যি পরিমাণ। কিন্তু এটি কোনো কথা নয়। শিক্ষক মানে মূল্যায়নকারী, শিক্ষার্থী মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন এক বিরাট সায়েন্স, এটি শিক্ষাদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি থেকে তাদের কোনোভাবে বিরত থাকা ঠিক নয়।

আর এটি আইন করে কোনো কাজ হয়না, জোর করে খাতা দিলেও সেগুলো সেভাবে মূল্যায়ন করা হবেনা। বোর্ড পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ছাড়াও শিক্ষকদের অনেক মহৎকাজে পাওয়া যায়না ( ব্যতিক্রম কিছু শিক্ষক ছাড়া)। সবাই বলেন, তাদের কোচিং আছে, প্রাইভেটি টিউশন আছে। এটি এক ধরনের ডিজিজ। আমরা বিভিন্নভাবে বোর্ডকে দায়ী করবো, মাউশিকে দায়ী করবো, মন্ত্রণায়কে দায়ী করবো অথচ আমাদের নিজেদের পবিত্রতম দায়িত্ব পালনে পিছিয়ে থাকবো, সেটি কখনই ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় কোনো মঙ্গল বয়ে আনেনা।

কিছু শিক্ষার্থীদের স্পেশাল পড়াতে হবে কিন্তু আমরা পড়াচ্ছি একেবারেই বাণিজ্যিকভাবে। শিক্ষার্থীদের কোনো দক্ষতার উন্নয়ন কি ঘটাতে পারছি? কিভাবে পারবো? এসব কাজ নিয়ে যেসব শিক্ষক বেশি ব্যস্ত থাকেন তাদের নিজেদেরই তো সেসব স্কীলের খবর নেই। এ প্রমাণ আমি মাঠে ঘাটে কাজ করে, শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে বাজিয়ে দেখেছি।

এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা নিজেদের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনতে যাচ্ছিলেন খোড়া কিছু যুক্তি দাঁড় করিয়ে। কিন্তু আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি তারা মারাত্মকভাবে এর বিরোধিতা করেছিলাম।

শিক্ষা বোর্ডসহ সমগ্র শিক্ষাপ্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম যে, শিশু শিক্ষার্থীদের এসব অযৌক্তিক দাবির কাছে মাথা নত করা যাবেনা কারণ তারা জানেনা যে তারা একটি একাডেমিক বছর ধ্বংস করতে বসেছিলেন। শিক্ষা প্রশাসনকে ধন্যবাদ যে তারা শিশুদের দাবির কাছে মাথা নত না করে পরীক্ষা নিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা নিতে গিয়ে দেখা গেলো স্মরণকালের অনুপস্থিতি পরীক্ষা হলে।

পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে সারাদেশে অনুপস্থিত ছিলেন ২৮ হাজার ৯৪৩ জন পরীক্ষার্থী। আর বহিষ্কার হয়েছেন ৮৩ জন পরীক্ষার্থী ও ১৮ জন পরিবদর্শক। এবার অনুপস্থিতির হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ১৫ এপ্রিল নয়টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডের অধীন ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন ১৫ হাজার ৬২৮ জন। দাখিল পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ১ হাজার ৪৯০ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২ হাজার ৮২৫ জন অনুপস্থিত। এর কারণ হিসেবে বোর্ড যদিও বলছে শুধুমাত্র বাল্যবিয়ে, তা কিন্ত নয়।

কোভিডের পর তথাকথিত নতুন কারিকুলামের বাতাস শিক্ষার্থীদের মূল পড়ালেখা থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। এরপর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জুলাই বিপ্লব। জুলাই বিপ্লবের পর শিক্ষার্থীরা শত শত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সঙ্গে, শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি অ্যাকশনে জড়িয়ে পড়েন। তারা প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষদের অপসারণে নেমে পড়েন। সামান্য কোনো কারণে রাস্তায় নেমে পড়েন। বই, শ্রেণিকক্ষে থাকা, কিংবা লেখাপড়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন।

ফলে তারা ওই অবস্থায় পাবলিক পরীক্ষায় বসতে চাননি। কর্তৃপক্ষের দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে যদিওবা বসেছেন কিন্তু লেখার মতো অবস্থায় তারা ছিলেন না। ফলে, অনেকেই পরীক্ষায় একেবারেই বসেননি, যারা বসেছেন তাদের অনেকেই নকলের আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারপরেও হাজার হাজর শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন নি। এটির জন্য শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বোর্ড , মাউশি বা মন্ত্রণালয় এককভাবে দায়ী নন। পুরো অবস্থা এজন্য দায়ী। সকল শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিষ্ঠান ও সমগ্র শিক্ষা প্রশাসনকে শক্ত, সতর্ক, ন্যায্য ও জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষার পর এ প্লাস আর গোল্ডেনে সয়লাব হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে। শিক্ষা ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থীরা যে নম্বর অর্জন করে তারা যা পারেন তার ওপরই যেন নম্বর হয়’ অর্থাৎ তারা যা পারেন নম্বরও সে রকম হতে হবে।

রাষ্ট্র তাকে কোনো খয়রাতি নম্বর দেবেনা। অর্থাৎ শিক্ষাবোর্ডগুলো পরীক্ষকদের উদারভাবে খাতা মূল্যায়ন করার যে, নির্দেশনা দিয়ে থাকে, উপদেষ্টা সেই কথাটিই বলতে চেয়েছেন। এখানেও বোর্ড, পরীক্ষক সবাইকে যৌক্তিক হতে হবে তা না হলে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে আসা, প্রতিষ্ঠানেরা আভ্যন্তরীণ শিখন কার্যক্রম ও পরীক্ষায় গুরুত্ব সহকারে অংশগ্রহণ করবেন না। তারা পাবলিক পরীক্ষার মতো পরীক্ষায়ও যে, গুরুত্ব দেন না তার উদারহণ এবারকার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের বিরাট অংশের অনুপস্থিতি। এসএসসি পরীক্ষার গুরুত্ব যেনো কমে যাচ্ছে।

এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জীবনে যদিও একটিমাত্র ঢেউ, এটিই সবকিছু নয়, এটির ওপর জীবনের সবকিছু নির্ভরও করেনা তারপরেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই পরীক্ষার ফল সারাজীবনে বিভিন্নভাবে প্রভাবে ফেলে, সেটি হতে পারে নেগেটিভ, হতে পারে পজিটিভ। যারা বিভিন্ন কারণে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের কোনোভাবেই ভেঙে পড়লে হবেনা। তাদের শিক্ষা কার্যক্রমগুলোর ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় পর্যায়েও পরীক্ষাটিকে সংশ্লিষ্ট সবার যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

#এসএসসি #এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা #এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল #এসএসসি ভোকেশনাল