ছুটি নিয়ে আমেরিকায় পালিয়ে বরখাস্ত শিক্ষিকা | কলেজ নিউজ

ছুটি নিয়ে আমেরিকায় পালিয়ে বরখাস্ত শিক্ষিকা

বিভাগীয় মামলা শেষে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সরকারি কর্মকমিশন সবিচালয়ই সায় দিয়েছে তাকে বরখাস্তের বিষয়ে। ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ নারায়ণগঞ্জের সফর আলী কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক ঈশিতা মুখার্জীকে সরকারি চাকরি থেকে অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে বরখাস্ত করলো।

আমেরিকা থেকে আর ফিরেননি ঈশিতা মুখার্জী। ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগাযোগ না করে ছিলেন আত্মগোপনে। ৮০ দিনের ছুটি শেষ করে গাঢাকা দিয়ে ছিলেন আরো প্রায় দেড় বছর।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হলে শুরু হয় তদন্ত। রুজু হয় বিভাগীয় মামলা। কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় নোটিশ যায় ঈশিতা মুখার্জীর সব ঠিকানায়। তবে সাড়ে মিলেনি।

এরপর দ্বিতীয় নোটিশে কানে জল যায় তার। সূদূর আমেরিকা থেকে ইমেইলে জবাব দেন তিনি। জানান নিজের ও সন্তানের অসুস্থতার কথা। তবে তাতে শেষ রক্ষায় হয়নি ঈশিতা মুখার্জীর। হারাতে হয়েছে চাকরি।

বিভাগীয় মামলা শেষে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান সরকারি কর্মকমিশন সবিচালয়ই সায় দিয়েছে তাকে বরখাস্তের বিষয়ে। ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ নারায়ণগঞ্জের সফর আলী কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক ঈশিতা মুখার্জীকে সরকারি চাকরি থেকে অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে বরখাস্ত করলো।

ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ খ্রিস্টাব্দের পহেলা আগস্ট থেকে টানা ৮০ দিনের ছুটি শেষে আর কলেজ আঙ্গিনায় পা পড়েনি নারায়ণগঞ্জের সফর আলী কলেজের এই ইংরেজি প্রভাষকের।

চিকিৎসার কথা বলে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার পর দেশের ও চাকরির মায়া ত্যাগ করে যেন আমেরিকার স্বপ্নের ঘোর শেষ হয়নি তার। ফলে মার্কিন মুল্লুকেই থিথু হলেন। ফলে চুড়ান্ত ভাবে তাকে চাকরি থেকেই বরখাস্ত করলো সরকার। অব্যশ্য এর আগে নিয়ম অনুযায়ী তাকে তিন দফায় নোটিশ করা হয়েছে।

সরকারি নথি থেকে দেখা যায় ঈশিতা নারায়ণগঞ্জের সফর আলী কলেজের ইংরেজি প্রভাষক ছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে জানানো হয়,  ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৮০ দিন ব্যক্তিগত অনুমোদিত চিকিৎসা ছুটি কাটান তিনি। তার অনুমোদিত ছুটি শেষ হবার পরও দীর্ঘ ১ বছর ৬ মাস ২১ দিন কর্মস্থলে দেখা যায়নি তাকে।

দীর্ঘদিন অননুমোদিত ছুটি কাটানোর অভিযোগে কর্মচারী বিধিমালা ২০০৮ এর ৩(খ) ও (গ) অনুযায়ী অসাধারণ ও পলায়ন এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে নোটিশ পাঠানো হয়  এই প্রভাষককে।  

সাড়া না পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৭ (২)(ঘ) অনুযায়ী তার অনুপস্থিতির বিষয় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

তদন্তে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর ৩(খ) ও ৩ (গ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

পরবর্তীতে তাকে গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়।  দ্বিতীয় নোটিশে সাড়া মিলে ঈশিতার।

তিনি গত বছর অক্টোবরের ৭ তারিখে বিদেশ থেকে ইমেইলে দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব দেন।

জবাবে তিনি জানান, নিজের মাতৃজনিত জটিলতা এবং তার ছেলের অসুস্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অদ্যবধি অবস্থান করেছেন।

তার দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাবে প্রমানিত হয় যে, তিনি অনুমোদিতভাবে চাকরিতে অনুপস্থিত ছিলেন এবং বর্তমানেও অনুপস্থিত আছেন।

তার ইমেইল এর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ১৯ মার্চ তাকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী "চাকরি থেকে বরখাস্ত" গুরুদন্ড আরোপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কমিশন সচিবালয়ের মতামত চাওয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকারি কমিশন সচিবালয় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও গুরুদন্ড আরোপের সাথে একমত পোষণ করেন।

সরকারি কমিশন সচিবালয়ের চিঠিতে ঈশিকা মুখার্জী (২৪৭২৭) এর আলোচ্য বিভাগীয় মামলা সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাই তাকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর ৪(৩) বিধি অনুযায়ী গুরুদন্ড আরোপপূর্বক একই বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের সাথে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন একমত পোষণ করে এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই সিদ্ধান্তে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।