ছবি : সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরে একটি মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহার করেছেন শিক্ষক। এ ঘটনার ভিডিয়োটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (ভাইরাল)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োটি ৩৫ সেকেন্ডের। এর মধ্যে প্রথম ২৩ সেকেন্ড পর্যন্ত শিশুটিকে মারতে দেখা গেছে শিক্ষককে। ওই ২৩ সেকেন্ডে শিশুটিকে ২১ বার বেত্রাঘাত করা হয়।
ভিডিয়োতে দেখা যায়, চেয়ারে এক পা তুলে বেত হাতে ক্রমাগত শিশুশিক্ষার্থীকে পিটিয়ে চলেছেন এক শিক্ষক। তিনি শিশুটিকে পেটাতে পেটাতেই কান ধরে ওঠবস করতে বলেন। এরপরও নিস্তার মেলেনি। যখন শিশুটি কান ধরে ওঠবস করছিল, তখনো তিনি তাকে পেটাচ্ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিয়োটি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের আলীপুর নুরানী মাদরাসার। শিশুটি সেখানে হিফজ বিভাগে পড়ে। বয়স মাত্র আট বছর। পিটুনির এই ভিডিয়ো ছড়ানোর পর অনেকেই অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন।
ঘটনাটি ওই মাদরাসার আশপাশের বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঘটনাটি কবের সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম পরিচয়ও জানা যায়নি। মাদরাসাটির অধ্যক্ষের নম্বরে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘ভিডিয়োতে যেভাবে বেত্রাঘাত করতে দেখেছি, তা অমানবিক। ওই শিক্ষক চরম অন্যায় করেছেন। ঘটনাটি খোঁজখবর নিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার জেলা শহরের আল মঈন ইসলামী একাডেমীতে হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় শিক্ষক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্রেণিকক্ষে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে শাস্তি পেয়েছেন ৩০ জন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধের পরও সরকারি প্রাথমিকে বেতমারা চালু রয়েছে বলে অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক/মানসিক শাস্তি প্রদান সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে মোট ৩০জন শিক্ষক বিভিন্ন সময় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শারীরিক অথবা মানসিক শাস্তি দিয়েছেন। প্রতিবেদন তৈরির সময়কাল গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকগণ হলেন- নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারের ১০ নং ধন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জান্নাতুল ফেরদৌসী, ফরিদপুর সদরের ভাটিলক্ষিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক গোলজার হোসেন, ও নাগরকান্দা কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমান, ঢাকা ধামরাইয়ের রৌহ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহি উদ্দিন, টাঙ্গাইল মির্জাপুরের পোস্টকামুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আ. করিম, চট্টগ্রাম পাহাড়তলীর দক্ষিণ কাট্টলী প্রানহরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ইশরাক আহমেদ ও সরাইপাড়া হাজী আবদুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা।
আরও আছেন লক্ষ্মীপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ঈদগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রেহানা আফরোজ ও রাহেনা আক্তার, প্রতাপগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুতুল রানী সাহা, অর্চনা রানী সাহা ও জয়শ্রী রানী মজুমদার, চাঁদপুর সদরের কে আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শাহজাদী সাবিহা আক্তার, হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিত্যলাল দেবনাথ, ফরিদগঞ্জের শ্রীকালিয়া সরিকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাঙামাটি নানিয়ারচরের পুলিপাড়া সরিকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পদ কর, বরকল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষী নাথ চাকমা, নোয়াখালী বেগমগঞ্জের ১নং রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মুক্তা রানী কর ও কনক চন্দ্র দাস, নেসবগের জয়নুল আবদিন ফারুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোহাম্মদ অলি উল্যাহ, পটুয়াখালী বাউফলের ধাউড়াভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. আ. লতিফ।
এছাড়া অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন-সিলেট গোয়াইঘাটের উপরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আমিনা বেগম, সুনামগঞ্জ ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিকুল ইসলাম ও কুমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশিকুর রহমান, সদরের পৈন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আলী হোসেন, জগন্নাথপুরের বাগময়না আটহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈলের পারকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম, কুড়িগ্রাম উলিপুরের মহিদেব (নব) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাগেরহাট ফকিরহাটের জাড়িয়া জা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খাদিজা আক্তার, পাবনা চাটমোহরের রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. শাহিনুর রহমান।
এই ৩০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা দায়ের, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বন্ধ ইত্যাদি। অপরাধের ধরণ বিবেচনায় কাউকে কাউকে সতর্ক, তিরস্কার ও বদলিও করা হয়েছে।এদের শাস্তির পরিমাণ ও তার পরিনামের উপর নির্ভর করেই ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও বদলি কোনো শাস্তি নয়। বদলি চাকরির অংশ।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।