রাত পোহালেই উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা— কিন্তু এখনো প্রবেশপত্রই আসেনি। চরম দুশ্চিন্তা আর হতাশায় ভেঙে পড়েছিল রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের এইচএসসি ছাত্রী মোসা. শারমিন খাতুন। তবে শিক্ষার্থীর এমন দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ান কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহা. বায়েজীদ বোস্তামী। তিনি শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র পৌঁছে দিয়ে আসেন। শিক্ষকের চূড়ান্ত দায়িত্ববোধের ফল স্বরুপ পরদিন সকালে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন শারমিন খাতুন।
জানা গেছে, প্রবেশপত্র বিতরণের নির্ধারিত তারিখে ব্যক্তিগত কারণে কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন শারমিন খাতুন। পরবর্তীতে পরীক্ষার আগের দিন (বুধবার) কলেজে গিয়ে জানতে পারেন, ফরম পূরণের কিছু ত্রুটির কারণে তার প্রবেশপত্র আসেনি। এমন খবরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে শারমিনের মাথায়। পরিবারের একমাত্র আশা হয়ে ওঠা মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
এমন সময় এগিয়ে আসেন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহা. বায়েজীদ বোস্তামী। ওই শিক্ষক নিজেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাতেই নিজে শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে ছাত্রীর বাড়িতে পৌঁছে দেন। পর দিন পরীক্ষা শেষে ছাত্রীটির খোঁজও নেন তিনি।
পরীক্ষার্থী শারমিন খাতুন বলেন, স্যারের আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। নাহলে হয়তো আমি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সুযোগটাই হারিয়ে ফেলতাম। দেশের বহু জায়গায় অনেকেই প্রবেশপত্র না পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। আমি স্যারের জন্য চিরকৃতজ্ঞ।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বায়েজীদ বোস্তামী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো দেখি। ওদের সমস্যা আমাদের দায়িত্বের অংশ। শারমিনের বিষয়টি জটিল ছিল। কিন্তু আল্লাহর কৃপায় আমরা সময়মতো সমাধান করতে পেরেছি। এটা আমার একার কৃতিত্ব নয়, এটি একজন শিক্ষকের কর্তব্য।
এ বিষয়ে সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমিনা আবেদীন বলেন, প্রফেসর বায়েজীদ বোস্তামী একজন সৎ, মানবিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক। আমি গর্বিত যে, আমাদের কলেজে এমন একজন দায়িত্বশীল শিক্ষক আছেন। তার মতো মানুষের মূল্যায়ন হওয়া উচিত রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও।