কামরুল হাসান মামুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, বাংলাদেশের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকা সত্বেও কোথাও একটি পোস্ট-ডক ফেলোও নেই। মানে, এই দেশে গবেষণার ইকোসিস্টেমটাই এখনো দাঁড়ায়নি। দাঁড়াবে কীভাবে যে দেশের নীতিনির্ধারক আমলারা মনে করে পোস্ট-ডক করলে যেহেতু সার্টিফিকেট নেই সেহেতু এটার কোনো মূল্যই নেই। সত্যিই তাই।
শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক মামুন বলেন, আমার সহকর্মী ছিলো রাকিবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ যত ছাত্র-ছাত্রী তৈরি করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম মেধাবী হলো রাকিব রহমান। সে একাধিক জায়গা থেকে পোস্ট ডক করেছিলো। একটা পোস্ট-ডকের অফার একটা রিকগনিশন। ভালো গবেষক না হলে পোস্ট -ডক অফার কেউ পায় না। তার এই পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতাকে কোনো মূল্যায়ন করেনি। অথচ এই দেশে প্রোমোশনের ক্ষেত্রে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করে কিন্তু পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতাকে নয়। সে এখানে সহযোগী অধ্যাপক হতে চেয়েছিলো। তাকে করা হয়নি। তার প্রকাশনার মান, সাইটেশন সংখ্যা, গবেষণার মান, শিক্ষক হিসেবে সুনাম ঈর্ষণীয়। মূল্যায়ন হয়নি বিধায় দেশ ছেড়েই চলে গিয়েছে। ওতো এসেছিলো। অনেকে এখন আর আসেই না। কারণ এই দেশে মেধার মূল্যায়ন হয় না। তাই ভালো মানের গবেষণাও হয় না। যা হয় তার ৯০ শতাংশ গার্বেজ। এইবার একটু আশা করেছিলাম শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়বে, বিশ্বমানের একটা ইনস্টিটিউট হবে। সব আশা শেষ। এই দেশের উন্নতি জিন্দেগিতেও হবে না।
অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, ভারতের কলকাতার একটি ইনস্টিটিউটের পদার্থবিজ্ঞানের গবেষকরা গত ১ বছরে অন্তত ৮টি ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স এ প্রকাশ করেছে। পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের ৬৭ শতাংশ কাজ এই জার্নালে প্রকাশিত হয়। তাহলে বুঝতে পারছেন কি মানের জার্নাল। এইটাতো গেলো কেবল একটি ইনস্টিটিউটের কথা। এইরকম ইনস্টিটিউট খোদ কলকাতায় আরও অনেকগুলো আছে যেখান থেকে কমবেশি একই সংখ্যক বা বেশি আর্টিকেল এই জার্নালে প্রকাশ করে থাকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। আছে অনেকগুলো ইনস্টিটিউট আছে যেমন: পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ কাউন্সিল অফ সাইন্টিটিফ এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ বা সাইন্স ল্যাব, বাংলাদেশের নাসা খ্যাত স্পারসো। তা সত্বেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমাদের পদার্থবিদরা দেশে বসে কাজ করে একটি আর্টিকেলও ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স এ প্রকাশ করেছে বলে আমার জানা নেই। গবেষণা দুই প্রকার ১। disruptive research যার মাধ্যমে প্যারাডাইম শিফট হয়, ইম্পাক্টফুল গবেষণা হয় আর ২। ইনক্রিমেন্টাল রিসার্চ যা বিদ্যমান জ্ঞানের নানা ভ্যারিয়েন্ট বের করে সামান্য নতুন কিছু করা হয়।
অধ্যাপক মামুন বলেন, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানে ১০০ বছর আগের সত্যেন বোসের কাজের পর আর কোনেো disruptive research হয়নি। গতকাল আমার ছাত্র মোহতাসির সেরাজের সঙ্গে আমার বর্তমান থিসিস ছাত্রদের নিয়ে লম্বা একটা আড্ডা দেই। সেরাজ এখন ইউটি-অস্টিনে পিএইচডি করছে। আলাপে-আলাপে ও বলছিলো শুধু ওর বিভাগে ১০০ জনের বেশি পোস্ট-ডক ফেলো আছে। কলকাতার যেসব ইনস্টিটিউট থেকে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স এ আর্টিকেল প্রকাশিত হয় সেইসব ইনস্টিটিউটেও পোস্ট-ডক ফেলো আছে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।