শিক্ষার্থীদের আগামী দিনের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সাভারের বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় গণশিক্ষা উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দেশের সম্পদ, দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানদের একাংশ। আগামী দিনে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবেন। সততা, কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে আপনারা গড়ে তুলবেন সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, নিজেদের মেধা, শিক্ষা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের মানবসম্পদে পরিণত হতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং দক্ষ মানবসম্পদ অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ততদিন দেশ উন্নত হবে না, যতদিন পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য, দেশের অর্থনীতির হাল ধরার জন্য, পর্যাপ্ত সংখ্যক জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রকৃত উচ্চশিক্ষিত নাগরিক আমরা সৃষ্টি করতে না পারি।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করা। প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। বর্তমান যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আধুনিক বিশ্বমানের শিক্ষা ও জ্ঞান প্রযুক্তিতে দক্ষ, নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
উপদেষ্টা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদেরও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি আরো বলেন, তাদের অবদানে আমরা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের নব্য স্বাধীনতা বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, সামাজিক বৈষম্য, ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতা, পশ্চাৎপদতা, ইত্যাদির দূরীকরণ এবং সুখী-সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গড়ে তোলার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সাহাবুদ্দিন আহমেদের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতাবলে এই সমাবর্তনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, উপাচার্য প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ড. হাসান দিয়াব কনভোকেশন স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এবারের সমাবর্তনে ৩ হাজার ৯৫১ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১২ জন গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর, চেয়ারম্যান ও উপাচার্যসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘স্বর্ণপদক’ প্রদান করেন। উপদেষ্টা সমাবর্তন পদযাত্রায়ও অংশ নেন।
সমাবর্তনে চ্যান্সেলর এওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন- ফার্মেসি বিভাগের আবু ফারহান সিয়াম, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জাবেদ হাসান, নিউট্রিশান এন্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হুমায়রা আসিমা মিম, টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাশুর সাদ করিম এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আশিকুল হক।