শিক্ষা বাজেটে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি | শিক্ষা নিউজ

শিক্ষা বাজেটে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি

বাজেটে এবারও শিক্ষা খাতে বড় কোনো সুখবর নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে কিছুটা কমেছে।

#মেডিক্যাল #মাদরাসা #স্কুল #শিক্ষক

বাজেটে এবারও শিক্ষা খাতে বড় কোনো সুখবর নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে কিছুটা কমেছে। বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দকে ‘হতাশার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষা বাজেটে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি’ বলে মনে করছেন তারা।

গত ২ জুন (সোমবার) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার যে বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে সেখানে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৭ শতাংশ।

নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ নিয়ে হতাশ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ক্রমান্বয়ে শিক্ষায় বরাদ্দ অংকে বেড়েছে কিন্তু জিডিপির শতাংশে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে কমতে কমতে গত বাজেটে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশে ঠেকেছিল। কিন্তু টাকার অঙ্কে বেড়েছিল। টাকার অঙ্কে যেটুকু বাড়ে তার প্রায় সবটাই ইনফ্লেশন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন খেয়ে ফেলে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, যা সংশোধীত বাজেটে ৯৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকায় নেমে আসে। ওই টাকার পরিমাণ ছিল সংশোধিত বাজেটের ১৩.৩২ শতাংশ এবং জিডিপির ১.৭৮ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি দেশের শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ হলে সেটিকে ‘আদর্শ’ মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে এইটা চরম ফাঁকিবাজি কথা। বলতে হবে জিডিপির স্কেলে শিক্ষায় বরাদ্দ কতটা বেড়েছে। ইউনেস্কো বলে একটি দেশ শিক্ষায় নূন্যতম তার জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। কেন বলে? যাতে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করা যায়, যাতে করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও স্কলারশিপ পায়, যাতে করে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া যায়।

নতুন অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের থেকে টাকার অঙ্কে ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এবার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে মোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিন হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ টাকা হিসাবে কিছুটা কমেছে। তবে বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় এবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় তিন হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে ৮৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

নতুন অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য ১২ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ছিল।

এ দিকে নতুন অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য দুই হাজার ১৬৪ কোটি টাকা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ে ৯৩৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব ‘আশানরূপ নয়’ মন্তব্য করে সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, শিক্ষায় টাকার অঙ্কে যতটুকু বরাদ্দ বেড়েছে তা ‘আশানরূপ’ নয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষায় বারাদ্দ অনেকটা কমে যাওয়া ‘হতাশার’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকায় শিক্ষায় ‘আশানরূপ’ বরাদ্দ আসেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের হার আশানরূপ থাকলে শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ খাত আরও অগ্রাধিকার পেত।

এদিকে বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক মানের আউটকাম বেইজড অ্যাডুকেশন (ওবিই) পদ্ধতিতে কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় ৬২টি প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫১ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আট লাখ এবং স্নাতক পর্যায়ে এক লাখ ৬৫ হাজার অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি এবং গ্রাচুইটি প্রদানসহ সব স্তরের শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা বলেন।

এবারের বাজেটে এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য সুখবর রয়েছে। নতুন বাজেটে এবতেদায়ী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদরাসাগুলোর এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্টের হার ১৯ শতাংশ। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এটি ২০ শতাংশে উন্নীত করতে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে মহিলা পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জেলা পর্যায়ে পলিটেকনিক এবং উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

#মেডিক্যাল #মাদরাসা #স্কুল #শিক্ষক