ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারায় যে ইরানি | বিবিধ নিউজ

ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারায় যে ইরানি

ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বর্পূর্ণ হোক (শাহর আমলে যেমন ছিল)। তিনি মনে করেন, ইসলামিক রিপাবলিকের শাসন ব্যবস্থাই মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে।

#ইসরায়েল #ইরান

ইরানের ক্ষমতাচ্যুত শাহর পুত্র প্রিন্স রেজা পাহলাভির ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ইসলামিক বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে তিনি ক্রমাগত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সমালোচক এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলে আসছেন। তিনি প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন বাদ দিয়ে জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে। অনেকের কাছে এটা স্পষ্ট যে, তিনি ইরানে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতকে পুঁজি করে আবারও ক্ষমতায় ফেরার পথ সুগম করতে চাইছেন।

রেজা পাহলাভি প্রকাশ্যে বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বর্পূর্ণ হোক (শাহর আমলে যেমন ছিল)। তিনি মনে করেন, ইসলামিক রিপাবলিকের শাসন ব্যবস্থাই মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে।

রেজা পাহলাভিকে সমর্থন দিচ্ছে আবার কারা? তথ্য বলছে, তার এ পদক্ষেপকে সমর্থন ও উৎসাহ দিচ্ছে ইসরায়েল ও পশ্চিমা মহল। কারণ তিনি মনে করছেন, ইসলামিক রিপাবলিকের পতনই মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আসবে। অপর দিকে সমালোচকরা বলছেন, রেজা পাহলাভিতে বিনিয়োগ মানে হচ্ছে বিদেশিদের মাধ্যমে আবারও অভ্যুত্থান ও অরাজকতা চাপিয়ে দেওয়া।

সম্প্রতি তিনি সামাজিক মাধ্যমে ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যে ভাষায় কথা বলছেন, তা অনেকটাই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাষণের সাথে মিলে যাচ্ছে।

তিনি বলছেন, ‘আলী খামেনি ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রই এই অস্থিরতা ও যুদ্ধের কারণ।’ তার দাবি, এটা ‘ইরান ও তার জনগণের লড়াই নয়, এটা হচ্ছে খামেনি ও ইসলামী সরকারের লড়াই।’

রেজা পাহলাভিতে সমর্থন রয়েছে ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের। কারণ তিনি বলেছেন, ইসলামিক রিপাবলিককে উৎখাত করাই সমাধান, যা অনেকটাই অমেরিকা ও ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলে যায়। তিনি রাজপথের আন্দোলন ও ধর্মঘট সমর্থন করেন, যা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়াতে পারে ও অভ্যুত্থানে সহায়ক হতে পারে।

অনেক আন্তর্জাতিক ও প্রবাসী ইরানি মনে করে, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই হতে পারে সমাধান, অপরদিকে অনেকে সম্রাট পরিবারের অল্পকালীন শাসনকে ভুলে যায়নি। তারা মনে করে, পাহলাভিদের ফেরত আসা মানে আবারও স্বৈরশাসন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিই চাইছে যে ইসলামিক রিপাবলিক দুর্বল হোক ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়ুক। কারণ হচ্ছে—ইরানকে দুর্বল ও অরক্ষিত রাখা গেলে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বজায় রাখা ও নিরাপত্তার অজুহাতে অনুচিত পদক্ষেপ নেওয়া অনেক সহজ হয়।

রেজা পাহলাভিতে চাইছেন, কিছু ধর্মীয় নেতা ও সেনাপ্রধানের কবল থেকে ক্ষমতা জনগণের কাছে ফেরত যাক। তিনি প্রকাশ্যে বলছেন, এটা অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও চাপের মাধ্যমে হতে পারে— বিদেশি সেনাবাহিনী বা অভ্যুত্থান দিয়ে নয়।

সমালোচকরা বলছেন, রেজা পাহলাভিকে সমর্থন দেওয়া মানে হচ্ছে, সমগ্র দেশের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত ও অরাজক করে দেওয়া। রেজা পাহলাভি চাইছেন, বিদেশিদের সমর্থন ও অভ্যুত্থানকে পুঁজি করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে।

ইরানে সরকার পতন চাইছে ইসরায়েল

ইরানে শুক্রবার যে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল, তা শুধু পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করার জন্যই নয়, বরং তারা চাইছে ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টি হোক ও সরকার দুর্বল হয়ে পড়ুক। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মনে করছেন, যদি মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে, তাহলে ইসলামিক সরকারের পতন হতে পারে। অনেক ইরানি অর্থনৈতিক দুর্দশায় রয়েছে ও মত প্রকাশের সুযোগ কম, তাই ইসরায়েল চাইছে এই অসন্তুষ্টিকে কাজে লাগাতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারা ক্ষমতায় আসবে বা দেশটি কি অরাজকতায় পড়ে যাবে কিনা, তা অনিশ্চিত। শাহর পুত্র রেজা পাহলাভির নেতৃত্ব দেওয়া সহজ নাও হতে পারে। অপরদিকে, ইরান চাইছে স্থিতিশীলতা রাখতে ও আরও বড় লড়াই এড়াতে। তাই এই লড়াই মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

ইসরায়েল-ইরানের ইতিহাস

ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছেন যে ইরানি

ইরান ও ইসরায়েল আজ ‘চিরশত্রু’ হিসেবে বিবেচিত হলেও, সম্পর্কের ইতিহাস একেবারে বিরোধপূর্ণ ছিল না। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিভাজন পরিকল্পনায় ইরান আপত্তি জানায়। তারা একটি যুক্ত ফেডারেটেড রাষ্ট্র চেয়েছিল যেখানে আরব ও ইহুদি ক্যান্টন থাকবে। তবুও, ১৯৫০ সালে ইরান তুরস্কের পর মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনামলে ইরান-ইসরায়েল বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, একে অপরের রাজধানীতে দূতাবাস খোলে, ইরান তেল সরবরাহ করে। তবে, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব এ সম্পর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। খামেনি নেতৃত্বাধীন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে রূপান্তর করে এবং ইসরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, জিউস নিউজ সিন্ডিকেট, দ্য জিউস ক্রোনিক্যাল, দ্য জেরুজালেম পোস্ট, টাইম

#ইসরায়েল #ইরান