সবচেয়ে জরুরি ছিল শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন, কিন্তু সেটাই হয়নি | বিবিধ নিউজ

সবচেয়ে জরুরি ছিল শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন, কিন্তু সেটাই হয়নি

‘শিক্ষার গুণগত সংস্কার করতে হবে। শিক্ষার সংস্কার খুবই জরুরি ছিল। সরকার যেকোনো কারণে হোক, এখনো এটা করেনি। কিন্তু করতে হবে। কারণ, (শিক্ষার মানোন্নয়নে) এটাই একমাত্র উপায়।’

শিক্ষা খাতে সংস্কার খুবই জরুরি ছিল উল্লেখ করে এ বিষয়ে কমিশন গঠন না করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেছেন, ‘অবাক হয়ে লক্ষ করছি, সরকার প্রচুর কমিশন গঠন করেছে, কিন্তু শিক্ষা কমিশন করেনি।’

অধ্যাপক আজম আরও বলেন, ‘শিক্ষার গুণগত সংস্কার করতে হবে। শিক্ষার সংস্কার খুবই জরুরি ছিল। সরকার যেকোনো কারণে হোক, এখনো এটা করেনি। কিন্তু করতে হবে। কারণ, (শিক্ষার মানোন্নয়নে) এটাই একমাত্র উপায়।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘‍বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক অধিকার লঙ্ঘন: প্রতিকারের নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া নামে একটি সংগঠন এ সভার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রের সংস্কার চাই। রাষ্ট্র সংস্কারের এক নম্বর ব্যাপার হলো শিক্ষা সংস্কার করা। এ ব্যাপারে আশা করছি, সরকার উদ্যোগ নেবে দীর্ঘমেয়াদি; যেন পরের সরকারগুলো চট করে পরিবর্তন করে ফেলতে না পারেন।’

শিক্ষা খাতে বাজেটে কম বরাদ্দ রাখার কঠোর সমালোচনা করেন অধ্যাপক আজম। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশসহ বেশির ভাগ দেশে শিক্ষায় জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ আছে। বাংলাদেশে বহুদিন ২ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। এখন আছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আপনি শিক্ষা সম্পর্কে আলাপ করবেন, আলাপ একটাই। রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া একটাই। অন্তত ৪ শতাংশ, আমাদের উপমহাদেশে যা আছে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘আপনি ইন্ডিয়ার মতো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় চান? এশিয়ার ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ইন্ডিয়ার ২০টা আছে। আপনার (বাংলাদেশের) একটাও নেই। পাকিস্তানের ১০-১২টা আছে। আপনি লজ্জা পান তো। তাদের (ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের) বাজেটটা একটু দেখেন। তারা মাস্টারদের কী পরিমাণ টাকা দেয়। শিক্ষা খাতে তাদের বাৎসরিক বাজেট কত।’

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের বেতন কমের বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকদের বেতন ১৭ হাজার টাকা। আমাদের হাইস্কুলে যে স্ট্যান্ডার্ড টিচার নেই, ইউনিভার্সিটিতে স্ট্যান্ডার্ড টিচার নেই, ইউনিভার্সিটির অবকাঠামো নেই, এগুলোর বড় কারণ, টাকা খুবই কম।’ শিক্ষকেরা নৈতিকতার কারণে ভালো পড়াবেন, এগুলো বাজে চিন্তা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নতুন বাংলাদেশ চাইলে, সংস্কার চাইলে প্রয়োজন শিক্ষা—এমনটা উল্লেখ করে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে কীভাবে বরাদ্দ এ পরিমাণে (অন্তত জিডিপির ৪ শতাংশ) নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সব অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে আলাপ করে রোডম্যাপ তৈরি করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

‘শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক না হলে উন্নয়নের ভবিষ্যৎ নেই’

আলোচনা সভায় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক করতে না পারলে এখানে (বাংলাদেশে) উন্নয়নের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এখানে ১ নম্বর, ২ নম্বর, ৩ নম্বর অগ্রাধিকার হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঠিক করা।

মুশতাক খান বলেন, ‘এত দিন অন্ধের স্বর্গে ছিলাম যে শিক্ষাব্যবস্থা যা-ই হোক, আমাদের উন্নতি হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে—এই যুগ শেষ।’ তিনি বলেন, একটা জাতির শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলা হলে সেই জাতির কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

‘বর্তমান সরকার হয়তো বেশি দিন থাকবে না। তারপর আরেকটা সরকার আসেব। সেই সরকার যাতে ভুলে না যায়, সেটা আমাদের প্রতিদিন মনে করিয়ে দিতে হবে যে জাতি ধ্বংসের প্রান্তে চলে এসেছে,’ বলেন মুশতাক খান।

এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক বেশি দক্ষ ও শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন। এখানে সার্টিফিকেট ব্যবসা করে হবে না। কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদনক্ষমতা না থাকলে আপনি বিশ্ববাজারে কিছু বিক্রি করতে পারবেন না।’

শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন বলে আলোচনা সভায় অভিমত দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম এবং এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসিম।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইউসুফ আলী, উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মাহবুব আলম, আয়োজক সংগঠন কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়ার মুখপাত্র প্লাবন তারিক, আহ্বায়ক বেলাল হোসেন। সভা সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

এদিকে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া শিক্ষা অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক, অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এত দিন অভ্যন্তরীণভাবে এ সংগঠনের কার্যক্রম চললেও আজই প্রথম বাইরে কোনো কর্মসূচি আয়োজন করেছে তারা। আজকের আলোচনা সভার মাধ্যমে তাঁরা শিক্ষার সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।

এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, মূল্যায়নপদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষা বাজেট অগ্রাধিকার, গবেষণামূলক উচ্চশিক্ষা, নিয়োগ কমিশন গঠন, মাদ্রাসাশিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং বুলিং ও র‍্যাগিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ।