কোরবানির সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাহাত্ম্য | মতামত নিউজ

কোরবানির সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাহাত্ম্য

কোরবানি মহান আল্লাহর শাশ্বত বিধান। এ বিধান এক দিকে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ, তেমনি সামজিক স্থিতিশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের সহায়ক। অনেক গরিব দুঃখী আছেন, যারা বছরে এই একটিমাত্র ঈদে এক দুই টুকরো মাংস মুখে দিতে পারেন। কোরবানির পশু জবাই বন্ধ হয়ে গেলে তাদের মুখে ওইটুকুও পড়বে না। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানে দৈনিক পঁচাশি গ্রাম গরুর মাংস খেতে বলা হয়েছে। কারণ গরুর মাংসে আছে মানব দেহের প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটির নাম হচ্ছে জিংক, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

#কোরবানি

কোরবানি আসলে কী? পশু জবাই করা? তাহলে প্রতিদিনই যে হাঁটে মহল্লায় শত শত পশু জবাই হচ্ছে, সেগুলোকে আমরা কোরবানি বলি না কেন? কোরবানি মূলত ত্যাগের পরীক্ষা। অন্তরে যে আমিত্ব, অহংকার, হিংসা আর লোভের পশুত্ব রয়েছে, সেই পশুত্বকে জবাই করাই বড় কোরবানি। তাই বলে কোরবানির পশু জবাই করা বন্ধ করে দেব?

কোরবানি এলেই এক শ্রেণির লোক ইনিয়ে বিনিয়ে কোরবানিকে বন্ধ করতে চায়। তারা বলে বেড়ায় এটি নাকি পশুহত্যা। অথচ এই মানুষগুলোই অন্য সময় গরু ছাগল, এমনকি শুয়োর পর্যন্ত ভক্ষণ করে। তখন তাদের পশুপ্রেম কোথায় থাকে?

কোরবানি মহান আল্লাহর শাশ্বত বিধান। এ বিধান এক দিকে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ, তেমনি সামজিক স্থিতিশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের সহায়ক। অনেক গরিব দুঃখী আছেন, যারা বছরে এই একটিমাত্র ঈদে এক দুই টুকরো মাংস মুখে দিতে পারেন। কোরবানির পশু জবাই বন্ধ হয়ে গেলে তাদের মুখে ওইটুকুও পড়বে না। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানে দৈনিক পঁচাশি গ্রাম গরুর মাংস খেতে বলা হয়েছে। কারণ গরুর মাংসে আছে মানব দেহের প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটির নাম হচ্ছে জিংক, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কোরবানির পশুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকগুলো মানুষের জীবন-জীবিকা ও জাতীয় অর্থনীতি। কোরবানির জন্য যেসব খামারিরা বছরব্যাপী পশু লালন-পালন করে আসছেন, কোরবানির পশু জবাই বন্ধ করে দিলে তাদের কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন? শুধু খামারিই নয়, অনেক দিন-মজুরও আছেন, যারা কোরবানির পশু হাট থেকে কোরবানি দাতার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে থাকেন। তাদের কী হবে? তাছাড়া কোরবানি একটি ধর্মীয় বিধান। এটি রদবদল করার ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি।

আরেকটি কথা। অনেকেই কোরবানির পশু নিয়ে শোডাউন করেন। কত লাখে গরু কিনেছেন, তা প্রচার করে বেড়ান। এসব কাজ থেকে বিরত থাকুন। নিয়তে ইখলাস রাখুন। নতুবা হাদিসে কোরবানির যে ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তা বিনষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যে। যে কোরবানিতে তাকওয়া নেই, আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা নেই, আল্লাহর কাছে তার কোনো মূল্য নেই। পবিত্র কোরআন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’ (সুরা মায়িদা: ২৭)

কোরবানির পশুর যত্ন নেওয়াও পূণ্যের কাজ। অনেকেই কোরবানির পশুর সাথে খারাপ আচরণ করেন। দীর্ঘ পথ পায়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যান। কোথাও কোথাও পশুকে রশি বেঁধে ছাদে তুলতেও দেখা যায়। এগুলো নিন্দনীয়। বরং আমাদের উচিত কোরবানির পশুকে সন্তানের মতো স্নেহে লালনপালন করা। এতে পশুর উপর যে মায়া জন্মাবে, সে মায়াকে অল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার নামই হবে কোরবানি। এমন কোরবানিতেই দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)

লেখক : প্রাবন্ধিক; ইমাম ও খতিব, কসবা জামে মসজিদ

#কোরবানি