বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক এলাকায় এক শিক্ষকের ওপর অতর্কিত হামলা এবং আবাসিক এলাকায় শিক্ষকদের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। যার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষকদের মাঝে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল হককে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন সড়কে মারধর করে দুর্বৃত্তরা।
পরে ওই শিক্ষক ও ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারীর বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
একই রাতে কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল আলমের বাসায়ও ভাঙচুর চালানো হয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারী।
ঘটনার সময় নিরাপত্তা কর্মীদের অনুপস্থিতি ও ঘটনা পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই শিক্ষকদের ওপর এরকম হামলা এবং সেটির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো সক্রিয় পদক্ষেপ না নেওয়াকে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল হক বলেন, ‘ মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব থেকে বাসায় ফিরছিলাম। ঠিক সেই সময় একটি মোটরসাইকেলে তিনজন দুর্বৃত্ত আমার পিছু নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তারা আমাকে আবারো আক্রমণ করে। তারা আমাকে এলোপাথাড়ি লাথি দেয় এবং হাতের মুঠিতে কিছু একটা রেখে ঘুষি দিতে থাকে। মাথায় হাত দিয়ে ঢেকে রাখার কারণে বড় কোনো বিপদ হয়নি। হামলার পর তারা আমার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আমার বাসাতেই উপস্থিত ছিলো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ঘটনা সম্পর্কে জানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই একজন শিক্ষককে এভাবে মারধর করা হলো, অথচ নিরাপত্তা কর্মীদের দেখা মেলেনি। প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালেও তদন্ত বা বিচার নিয়ে কোনো আশ্বাস আমাকে তারা দেয়নি। প্রক্টরিয়াল বডি আমার বাসায় এসে শুধু বলেছে যে বিষয়টি দুঃখজনক। মঙ্গলবার যদি আমাকে গুলি করতো, তাহলেও কেউ নিরাপত্তা দিতে আসতো না। আমি মনে করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আমাদেরকে নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
ভুক্তভোগী অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারী বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১ টার দিকে আমার বাসার সামনে তিনটি ককটেল বিস্কোরণ করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে করে এসে ককটেল বিস্ফোরণ করে চলে যায়। গভীর রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ভেতরে ককটেল নিয়ে কেউ কিভাবে অবাধে চলে আসতে পারে সেটাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীদের তাহলে কাজটা কি? এতরাতে আবাসিক এলাকার তেতরে কেউ আসলে তাকে অবশ্যই তল্লাশী করে তারপরে অনুমতি দিতে হবে।’
ঘটনার বিষয়ে কথা বলার জন্য অধ্যাপক মো. শহীদুল হকের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রক্টর অধ্যাপক মো. আব্দুল আলীমের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।