ইসলামে সুবিচারের তাগিদ | মতামত নিউজ

ইসলামে সুবিচারের তাগিদ

সমাজজীবনে সুবিচারের গুরুত্ব অপরিসীম। সুবিচারের মাধ্যমে বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া অর্জন হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো; এটি তাকওয়ার নিকটবর্তী।’ (সুরা মায়েদা: ৮) যে সমাজে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে না সে সমাজে অন্যায় সংক্রামক ব্যাধির মতো চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

#ইসলাম #ইসলাম শিক্ষা

মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি হলো সুবিচার। কোনো সমাজে যদি অন্যায়-অবিচার; চুরি-ডাকাতি; হত্যা-রাহাজানি ইত্যাদি সমাজবিরোধী কার্যকলাপ প্রচলিত থাকে এবং অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সে সমাজের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষিত হয় না। এজন্য ইসলাম সুবিচারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

সমাজজীবনে সুবিচারের গুরুত্ব অপরিসীম। সুবিচারের মাধ্যমে বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া অর্জন হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো; এটি তাকওয়ার নিকটবর্তী।’ (সুরা মায়েদা: ৮) যে সমাজে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে না সে সমাজে অন্যায় সংক্রামক ব্যাধির মতো চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ অন্যায়কারীরা সুযোগ পেলে তাদের অপকর্ম আরও বাড়িয়ে দেয়। সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হলে কোনো লোকই অন্যায় করতে সাহস পায় না; ফলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে। সবাই নিজ নিজ অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারেন। রাসুল সা. ছিলেন ন্যায়বিচারের মূর্তপ্রতীক। তার কাছে আপন-পর; ধনী-গরিবের কোনো পার্থক্য ছিল না। ইসলামি রাষ্ট্রে আইনের চোখে সব নাগরিক সমান। প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক অধিকার রয়েছে। কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করাকে ইসলাম সমর্থন করে না।

সমাজকে সুশৃঙ্খলিত করার কাজে যারা সময় ব্যয় করেন তারা আল্লাহর প্রিয়। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত সবখানেই সুবিচার সমানভাবে জরুরি। সুবিচার ও সুশাসনের অভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধরে পচন। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে সবচেয়ে সংকট ছিল সুবিচার ও সুশাসনের। এজন্য আল্লাহ সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন সুবিচার ও ইহসান প্রতিষ্ঠা করার। সুবিচার ও সুশাসন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিচার বিভাগ; প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের মধ্যে। কারণ সমাজের প্রত্যেকের নির্ভরতা থাকে তাদের প্রতি। চালক শ্রেণির মানুষেরা অবিচার ও দুর্নীতিকে আশ্রয় দিলে সমাজের ভয়াবহ পরিণতি ঘনিয়ে আসে। সামাজিক বিশৃঙ্খলার জন্য প্রধানত দায়ী অবিচার ও অসততা। অপরাধী পার পেয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা বা সম্ভাবনা পেলে অনেক বড় অপরাধ সংঘটিত করতেও কুণ্ঠিত হয় না। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়েই সমাজকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্রিয় হতে হবে কর্তা ব্যক্তিদের।

সুবিচার ও ন্যায্য অধিকার পাওয়ার দাবিদার প্রত্যেকেই। পানি, আলো ও বাতাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। তেমনি সুবিচারও প্রত্যেক মানুষের সমানভাবে প্রাপ্য। এ ব্যাপারে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা এমনকি মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যেও কোনো পার্থক্য করা যাবে না। ইসলামের সুস্পষ্ট নীতি হলো: বিচার-বিবেচনার ক্ষেত্রে সবার প্রতি সমান থাকতে হবে। একচোখা নীতি ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামে বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের সুবিচার করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি বিচার করো, তখন তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফায়সালা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মায়েদা: ৫)

বিচারকাজে স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে বলেন : হে মুমিনগণ! তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যাও আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতারূপে। যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে কিংবা পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। কেউ যদি ধনী বা গরিব হয় তবে আল্লাহ উভয় প্রকার লোকের ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে বেশি কল্যাণকামী। সুতরাং তোমরা ইনসাফ করার ব্যাপারে ইচ্ছা-অভিরুচির অনুসরণ করো না। তোমরা যদ ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল বা পাশ কাটিয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে অবগত। (সুরা নিসা: ১৩৫)

একজন শাসক বা বিচারকের কাছ থেকে সুবিচার পাওয়া সমাজের প্রতিটি মানুষের অধিকার। কোনো কারণে সমাজের কেউ যদি অপরাধ করে, এজন্য তার শাস্তি হতে পারে। তবে শাস্তির ক্ষেত্রে কারও প্রতি সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। অন্যায়ভাবে কারও ওপর শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না। এমনকি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থের উদ্দেশেও কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে না। একজন প্রকৃত ঈমানদারের প্রতি তার ঈমানের দাবি হলো- সব মানুষের প্রতি সুবিচার করা। কারও প্রতি অবিচার করলে এটা হবে জুলুম এবং অন্যায়। আর আল্লাহ এ জাতীয় বিচার পছন্দ করেন না।

লেখক: আলেম, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

#ইসলাম #ইসলাম শিক্ষা