এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অবসর সুবিধা দিতে আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে ইলেকট্রনিক্স ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) বেতন-ভাতা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এর ফলে বেতন-ভাতা নিয়ে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতির সইয়ের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হবে না শিক্ষকদের। একইসঙ্গে জাল শিক্ষকদের অপকর্ম বন্ধ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
গতকাল বুধবার সকালে তিনি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) ইএফটি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। একই অনুষ্ঠানে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন সংক্রান্ত ডেটা ভ্যালিডেশন স্ট্যাটাসে বলা হয়, মোট এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ১৯ হাজার ৮৪৭টি। সাবমিটকৃত প্রতিষ্ঠান ১৯ হাজার ২৭৪টি, মোট শিক্ষক ও কর্মচারী ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮ জন।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান থেকে সাবমিটকৃত ডেটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮২টি। আঞ্চলিক অফিস থেকে মোট অনুমোদিত ডেটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৬১টি।
১ম পর্যায়ে ইএফটিতে বেতন পাঠানো হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭ শিক্ষক-কর্মচারীর। পর্যায়ক্রমে ভ্যালিডেটেড ডেটার ভিত্তিতে শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও'র টাকা পাঠানো হবে বলে জানানো হয়।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে তিন অধিদপ্তরের আওতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা ও শিক্ষক-কর্মচারীর প্রকৃত সংখ্যা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতায় থাকা ২০ হাজার ৩০৬ স্কুল-কলেজে মোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৩৯২ জন শিক্ষক ও ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৬ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে ভবিষ্যত কর্ম-পরিকল্পনা সর্ম্পকে বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় থাকা মাদরাসার এমপিও সিস্টেমের সঙ্গে আইবাস ডাবল প্লাসের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৮টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হবে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা ইএফটি পদ্ধতিতে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেও জানানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরো জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতায় ২ হাজার ৮২৮ কলেজে কর্মরত রয়েছেন ৬৮ হাজার ৯৪৯ জন শিক্ষক ও ২৮ হাজার ২৫৭ কর্মচারী আর ১৭ হাজার ৪৭৮ স্কুলে কর্মরত রয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪৩ শিক্ষক ও ২৮ হাজার ২৫৭ জন কর্মচারী।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে ৮ হাজার ২২৯ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৯ জন শিক্ষক ও ৪২ হাজার ১৩৪ জন কর্মচারী এবং কারিগরির ২ হাজার ২৮২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন ১৬ হাজার ৫৫৭ জন শিক্ষক ও ৫ হাজার ৫৫৬৪ জন কর্মচারী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম বলেন, ইএফটিতে বেতন-ভাতা দেয়ার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা অনেক হয়রানি থেকে যেমন বাঁচবেন, আবার ভুয়া এমপিও চিহ্নিত করা যাবে এবং অর্থ সাশ্রয়ী হবে।
তিনি বলেন, ইএফটি কার্যক্রমে প্রায় ১০ হাজার জাল শিক্ষক চিহ্নিত হয়েছেন। এতে আমাদের ৪৮০ কোটি টাকা সরকারের সাশ্রয় হয়েছে। এটি শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তথ্য। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে আশা করা যায় এর সমপরিমাণ বা বেশিও হতে পারে। ইএফটিএ বেতন কার্যক্রম চালু হলে আমরা এটা বের করতে পারবো এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা- জেলা শিক্ষা অফিসে ও উপপরিচালকের অফিসে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও করার সময় রেকর্ডপত্র যাচাইয়ের নামে যে হয়রানি এই বিষয়টি কীভাবে কমানো ও এ কার্যক্রমকে অনলাইনে করা যায় তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এসসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীম।
ইএফটি: ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটি হলো এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করার মাধ্যম। এই স্থানান্তরগুলো ব্যাংকের কর্মকর্তা ছাড়াই স্বাধীনভাবে লেনদেন সম্পন্ন করা যায়।
এপিআই: অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস বা এপিআই হচ্ছে এক গুচ্ছ ফাংশনের সমষ্টি। এটি একটি ইন্টারফেস যা কোনো কম্পিউটার, লাইব্রেরি অথবা অ্যাপলিকেশন অন্য অ্যাপ্লিকেশনকে বিভিন্ন সার্ভিস দেয়ার লক্ষ্যে বা ডেটা বিনিময়ের জন্য প্রদান করে থাকে। সাধারণত সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক কোম্পানি এটি তৈরি করে। অন্য কোনো প্রোগ্রাম ওই সফটওয়্যারকে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করতে চাইলে এপিআইয়ের মাধ্যমে সফটওয়্যারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে।
আইবাস ডাবল প্লাস: আইবাস ডাবল প্লাস একটি ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয্যার, যার মাধ্যমে সরকারের বাজেটপ্রণয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন, বরাদ্দ বিভাজন, অর্থ অবমুক্তি, বাজেট পুনঃউপস্থাপন, অনলাইনে বিল দাখিল এবং তার বিপরীতে চেক বা ইএফটির মাধ্যমে টাকা দেয়া, রাজস্ব জমার হিসাবরক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় ব্যাংক হিসাব সমন্বয় ইত্যাদি আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করে থাকে।
ডেটা ভেলিডেশন: ডেটা ভেলিডেশন এক্সেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বহুল ব্যবহৃত ফিচার। এর দ্বারা নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সেলগুলোকে নির্দিষ্ট ডেটা ইনপুট করার নিশ্চয়তা দেয়। এটি ব্যবহার করে সেলের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের ডেটা এন্ট্রি নিশ্চিত করা যায় এবং ভুল ডেটা এন্ট্রির সম্ভাবনা কমাতে পারে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।