অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, বাংলাদেশের মতো এতো বেতন ও শ্রেণি বৈষম্যের দেশ খুব কম আছে। এই বৈষম্য কেনো? রাষ্ট্রের কে কেমন বেতন পাবেন, যারা মোটাদাগে সেটা নির্ধারণ করেন, তাদের চরম স্বার্থপরতার প্রতিফলন হলো তীব্র বেতন বৈষম্য।
বৃহস্পতিবার (১ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মামুন বলেন, কিন্তু আমরা ভুলে যাই রাষ্ট্রের অধিকাংশকে তীব্র অসন্তোষে রেখে, তীব্র অসুখী রেখে, ওরাও সুখে থাকতে পারে না। পারে না বলেই এক সময় ওরা অসন্তুষ্ট হয়ে দেশে ছেড়ে চলে যায়। অথচ একটু চেষ্টা করলেই নিজের দেশটাকেই বদলে দিতে পারতো। প্রতি বছর সুখী দেশের একটা র্যাঙ্কিং হয় আর সেই সুখী দেশের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকে নর্ডিক ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো। আমেরিকা না। শুধু নর্ডিক ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ না, গোটা ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশের মানুষই সুখী।
অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, এই তো মাত্র কদিন আগে স্কটল্যান্ড ঘুরে আসলাম। স্কটল্যান্ডের গ্রাম-শহর প্রায় সবটাই তন্নতন্ন করে চষে বেড়িয়েছি। এডিনবরাতে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষুক দেখেছি। কিন্তু তারা কাতর হয়ে আপনার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করছে না। তারা ট্রাডিশনাল ড্রেস পরে ব্যাগপাইপস বাজিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করে। মানুষ তাদের বাজানো বাঁশি শুনে খুশি হয়ে সামনে রাখা বক্সে টাকা দেয়। সেই অর্থ দিয়ে তাদের বাড়ি এমনকি গাড়িও হয়। ওখানে যে রেস্টুরেন্টে ওয়েটার, তারও একটা বাড়ি আছে এবং গাড়ি আছে। সেও বছরে একবার বেড়াতে যায়।
ইতালি ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরপর আমার স্ত্রীর বাড়ি ইতালি গেলাম। যেখানে গেলাম, সেটা ভেনিস শহর থেকে এক ঘণ্টার ড্রাইভিং দূরত্বে। সেটাও ইতালির একটা গ্রাম। আমাদের ধনীরা যে ইদানিং ডুপ্লেক্স বাগান বাড়ি বানায়, সেই গ্রামের প্রতিটা বাড়ি এসব বাগানবাড়ির চেয়েও সুন্দর। প্রায় প্রতিটা বাড়ির সামনে বাগান আছে, একটা কুকুর আছে। কুকুরগুলোকেও আমার কাছে সভ্য মনে হয়। আসলে শিক্ষিত ও সভ্য মানুষের সংস্পর্শে থেকে ওরাও সভ্য হয়ে যায়।
ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, এই যে স্কটল্যান্ড বা ইতালির মানুষদের জীবনযাত্রার মানের কথা বললাম, এমনটি হলো কীভাবে? এটি সম্ভব কারণ সেখানে বেতন বৈষম্য নেই বললেই চলে। আমার শ্বশুর বাড়ির আশেপাশে অনেকেই বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের দেখা-শোনার জন্য কেয়ার গিভার রাখেন। সেই কেয়ার গিভারও নিজের গাড়ি চালিয়ে কাজে আসে। আর আমরা দেখি আমাদের বাসার কাজের মানুষটি ভোরবেলা থেকে শুরু করে রাত অবধি তিন-চার বাসায় কাজ করেও পরিবারের চরম দারিদ্র্যতা ঘোচাতে পারেন না।
অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, যে নারী ইট ভাঙার কাজ করেন, সে সারাদিন ইট ভেঙেও পরিবারের অভাব দূর করতে পারেন না। গার্মেন্টস শ্রমিক ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সবার জন্য রান্না করে এক ঘণ্টা হেঁটে কর্মস্থলে গিয়ে রাত অবধি কাজ করেও, ন্যূনতম ভালো থাকার মতো টাকা উপার্জন করতে পারেন না। এই দেশে এখনো রিকশা চালানোর মতো অমানবিক পেশা আছে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।