দেশে আসলে শিক্ষা নাই, শিক্ষক নাই: অধ্যাপক মামুন | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

দেশে আসলে শিক্ষা নাই, শিক্ষক নাই: অধ্যাপক মামুন

সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে অরাজকতা দেখেছেন বুঝতে পারছেন না যে দেশে আসলে শিক্ষা নাই, শিক্ষক নাই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

#বিশ্ববিদ্যালয় #স্কুল #শিক্ষক #শিক্ষার্থী

সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে অরাজকতা দেখেছেন বুঝতে পারছেন না যে দেশে আসলে শিক্ষা নাই, শিক্ষক নাই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

মঙ্গলবার (২০ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ মন্তব্য করে।

পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

ইতালির তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী জর্জিও পারিসিকে চীনের পূর্বাঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে complexity sciences এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিয়োগ দিয়েছে। এটি চীন যে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাকে জোরদার করতে চায় তার একটি প্রমাণ। এই নিয়োগের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো পারিসির মাধ্যমে আরও প্রতিষ্ঠিত বিদেশি বিজ্ঞানীদের তারা আকর্ষণ করতে চায়। পারিসি ইতিমধ্যেই সেখানে কাজ শুরু করেছেন।

এক সংবাদে জানা গিয়েছে, বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিস্ট পার্টির সচিব ঝাও চ্যাংলু (Zhao Changlu) আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, পারিসি আরও শীর্ষস্থানীয় গবেষকদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবেন। এই উদ্যোগটি চীনের উচ্চতর গবেষণার কাঠামোকে বৈশ্বিক স্তরে উন্নীত করার বৃহত্তর কৌশলের একটি অংশ, যার মাধ্যমে দেশটি বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এবং মৌলিক গবেষণায় দ্রুত বিশ্বনেতৃত্ব অর্জনের চেষ্টা করছে।

চীনেরতো বিশ্বমানের বিজ্ঞানীর অভাব নাই। তারপরেও বিদেশিদের কেন নিয়োগ দিচ্ছে? শুধু তাকে না সহস্র ট্যালেন্ট হান্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিখ্যাত শিক্ষক ও গবেষকদেরকেও তারা হান্ট করেছে। এতে চীনের মানুষেরাতো বলছে না তাদের সরকার দেশকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীর কোন দেশ কাল নাই। আমেরিকায় এত বিদেশি কোম্পানি কাজ করছে, এত দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে বিদেশি চাকরি করছে কই তারাতো চিৎকার করছে না তাদের সরকার দেশকে বিদেশিদের কাছে বেঁচে দিচ্ছে।

আমি অনেকদিন যাবৎ বলে আসছি আমাদের উন্নতির যাত্রা শুরু করতে হলে প্রথমেই বিশ্বমানের একটা ইনস্টিটিউট করে জর্জিও পারিসির মত কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এনে তার মাধ্যমে আরও অনেক দেশি বিদেশিদের এনে দেশে সত্যিকারের গবেষণার দ্বার উম্মোচন করুন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দুইয়েকটাকে টার্গেট ধরে সেখানে বিশ্বমানের কাউকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে গড়ার পদক্ষেপ নিন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি বাংলাদেশে এখন এমন একজন শিক্ষক নাই যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানকে গড়া সম্ভব। এইটা না মুমকিন। এই সহজ সত্য কথাটি যত দ্রুত বুঝব তত দ্রুত দেশ উন্নত হবে।

সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেই অরাজকতা দেখেছেন বুঝতে পারছেন না যে দেশে আসলে শিক্ষা নাই, শিক্ষক নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরুন। এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য কোথাও দ্বিতীয় বা তৃতীয় এমনকি চতুর্থ জায়গায় পার্ট-টাইম পড়ায়। আনন্দে এত জায়গায় যায়? আমিতো নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই পার্ট-টাইম পড়াতে চাই না। কারণ এতে আমার গবেষণা, বই লেখা ইত্যাদি নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করা হয় না। আমার প্রচুর অবসর সময় দরকার। আপনারা অবসর বলতে যা বুঝেন আমার অবসর সেটা না। সেই অবসর সময়ে আমি আসলে চিন্তার জাবর কাটি। এইটা শিক্ষা ও গবেষণার জন্য খুবই দরকার।

যা বলছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করতে হলে এখানে টার্গেট করে বিশ্বমানের একজনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। তার নেতৃত্বে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালাকে ঢেলে সাজাতে হবে সাথে পোস্ট-ডক ও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ পদ্ধতি চালু করতে হবে। বিদেশি ভালো পোস্ট-ডক পেতে হলে ন্যূনতম ৮০ হাজার টাকা ফেলোশিপ দিতে হবে। এইটাকে base ধরে তারপর শিক্ষকদের বেতন নির্ধারিত করলেই সমস্যাকে আনলক করা হবে এর আগে নয়।

#বিশ্ববিদ্যালয় #স্কুল #শিক্ষক #শিক্ষার্থী