বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে রিগোরাস প্রক্রিয়া হতে হবে: অধ্যাপক মামুন | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে রিগোরাস প্রক্রিয়া হতে হবে: অধ্যাপক মামুন

অধ্যাপক মামুন বলেন, একটা ভিজিটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ দিবে অথচ কতো রিগোরাস নির্বাচন প্রক্রিয়া। কারণ, একজন শিক্ষক নিয়োগের গুরুত্ব তারা বোঝে। এখানে ভুল করা যাবে না। ভুল করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর কুফল অনেক বছর ধরে ভোগ করতে হবে। যেই চাকরির গুরুত্ব যতো বেশি সে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া ততো বেশি স্তরে বিভক্ত হয় যার প্রতিটি স্তরে ফিল্টার করা হয়। এইবার ভাবুন বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কীভাবে হয়।

#কামরুল হাসান মামুন #ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নিয়োগের গুরুত্ব বুঝে রিগোরাস প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে।

রোববার (১২ জানুয়ারি) অধ্যাপক মামুন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন।

পেস্টে তিনি লেখেন, আমার এক ছাত্র আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সের ভিজিটিং সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য দরখাস্ত করেছে। এই নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথম রাউন্ডের স্ক্রটিনি শেষ হয়েছে এবং আমার ছাত্র সেটা সফলভাবে অতিক্রম করেছে। এই পর্যায়ে সার্চ কমিটি আমার সাহায্য চেয়েছে। তারা কিছু স্পেসিফিক প্রশ্ন করেছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তরসহ একটা রেকমেন্ডেশন লেটার চায়। এরপরেও একাধিক স্তর অতিক্রম করতে হবে এবং তারপরই কেবল ফাইনাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে।

অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, একটা ভিজিটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ দিবে অথচ কতো রিগোরাস নির্বাচন প্রক্রিয়া। কারণ, একজন শিক্ষক নিয়োগের গুরুত্ব তারা বোঝে। এখানে ভুল করা যাবে না। ভুল করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর কুফল অনেক বছর ধরে ভোগ করতে হবে। যেই চাকরির গুরুত্ব যতো বেশি সে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া ততো বেশি স্তরে বিভক্ত হয় যার প্রতিটি স্তরে ফিল্টার করা হয়। এইবার ভাবুন বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কীভাবে হয়।

তিনি আরো বলেন, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ বোর্ড ঠিক করা হবে। এরপর নিয়ম রক্ষার জন্য দরখাস্তগুলো বিভাগে পাঠানো হবে। এতো বছর চাকরি করে বুঝলাম বিভাগ সেই দরখাস্তগুলো কেবল পরখ করে দেখে নিয়োগের বিজ্ঞাপন শর্ত পূরণ করে কি না। আচ্ছা এইটুকু দেখার জন্য বিভাগের ১ তৃতীয়াংশ সিনিয়র শিক্ষকদের মিটিং এর দরকার ছিলো? এই কাজটিতো একজন সাধারণ কেরানিই করতে পারতেন।

অথচ এটি একটি রিগোরাস প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারতো। বিভাগ প্রার্থীদের ডেকে ইন্টারভিউ নিতে পারতো। সেখান থেকে ফিল্টার করে অপেক্ষাকৃত ভালোদের ডেকে বিভাগের ছাত্রশিক্ষকদের সামনে সেমিনার দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারতো। এখানে আরেক দফা ফিল্টার করে একটা শর্ট লিস্ট করে ডিনের নেতৃত্বে আরেকটি ইন্টারভিউ হতে পারতো। সেখান থেকে দুই বা তিন জনের একটা শর্টলিস্ট তৈরী করে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য ভিসির নেতৃত্বে গঠিত নিয়োগ কমিটির কাছে পাঠাতে পারতো।

এতে ৩০-৪০ জনের ইন্টারভিউ নিয়ে ভিসিকে সময় অপচয় না করে একই সময় দুইজনের জন্য ব্যয় করে ভালোভাবে পরখ করে একজনকে নিয়োগ দিলে ভালো হতো। সারা বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ এমন ৩ থেকে স্তরেই হয়। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক বা ভোটার নিয়োগ বন্ধ হতো, যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক বলেন, অভ্যুথানের পর আশা করেছিলাম বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালায় এইরকম যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আশা করেছিলাম যে প্রার্থীর পিএইচডি ডিগ্রি তার এসএসসি এইচএসসি এবং অনার্সের রেজাল্ট দেখা হবে না। পিএইচডি প্রোগ্রামে এইসব দেখেই ভর্তি করা হয় এবং এই ডিগ্রি অর্জন করতে অন্তত গড়ে ৪ বছর লাগে।

এই বছরে প্রার্থী কি করলো সেটা দেখেই নিয়োগ দেয়া যায়। যার পিএইচডি আছে তার অনার্স-এ সিজিপিএ ৩.৫ আছে কিনা এইটা দেখা ঠিক না। আমার অনেক ছাত্র দেখেছি যাদের সিজিপিএ ৩.৫ এর কম কিন্তু অসাধারণ ভালো করেছে। এদের কেউ কেউ অপ্রেশার ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে পারলেও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দরখাস্ত করার যোগ্যতাই নেই। আমাদের মেধাবীদের একটি অংশকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতির পরিবর্তন না আনলে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের করতে পারবো না। একই সঙ্গে শিক্ষকতা পেশাকেও আকর্ষণীয় করতে হবে। এইটা না করতে পারলে ষোল আনাই মিছে হবে।

অধ্যাপক মামুন বলেন, আগের সরকারের সময় শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে থাকতো নীল দলের শিক্ষকেরা। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেখছি সাদা দলের শিক্ষকেরা তৎপর। সব পদ-পদবি এখন সাদা দলের শিক্ষকরাই পাচ্ছে।

#কামরুল হাসান মামুন #ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়