প্রতি বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের কয়েকটি বই তুলে দেয় সরকার। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি প্রচারমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে জনগণের মধ্যে এমন একটা ধারনা দেওয়া হয়েছিলো যে বছরের প্রথম দিনেই সব শ্রেণির সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর আওয়ামী সরকারের জারিজুরি ফাঁস করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি খোলাসা করেন যে, প্রতিবছরই সব বই দিতে মার্চ এপ্র্রিল পর্যন্ত লেগে যায়।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের হাতে সঠিক সময়ে বই পৌঁছে দিতে আগামী বছরের বই ছাপার কাজ এবার আগেভাগেই শুরু করেছে সরকার।
নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এরই মধ্যে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) চূড়ান্ত হয়েছে। স্পেসিফিকেশন কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। টেক কমিটির কাজও শেষের দিকে। টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি হয়ে গেলে মাঠপর্যায় থেকে চাহিদা নেবে এনসিটিবি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা পেলে টেন্ডার ওপেন করবে তারা। এনসিটিবি চাচ্ছে, চলতি এপ্রিল মাসের মধ্যেই সব কাজ শেষ করে টেন্ডার ওপেন করতে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বই ছাপার কাজ নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসে আগের সরকারের করা সব টেন্ডার বাতিল করে। গত বছরের আগস্টে সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন কঠিন এবং এই শিক্ষাক্রম গুটিয়ে নিয়ে পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার বার্তা দেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি হয়। সেখানে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে বলে জানানো হয়।
এতে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ চলতি বছর দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যে আগের শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যবইগুলো দেওয়া হবে। যেসব শিক্ষার্থী ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে তাদের আগের শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যবইগুলো দেওয়া হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, প্যাডাগগ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিগণের সহযোগিতায় ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে থেকে পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, আগামী বছরের বই ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠাতে চায় এনসিটিবি। যে কারণে বই ছাপানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। স্পেসিফিকেশন কমিটির কাজ শেষ করে এখন টেক কমিটি কাজ করছে। বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) চূড়ান্ত হয়েছে। টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরির কাজও চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা। এরপর মাঠপর্যায় থেকে বইয়ের চাহিদা নেওয়া হবে। চাহিদা পেয়ে গেলে টেন্ডার ওপেন করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে এনসিটিবি।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী বছরের বই ছাপানোর জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ মার্চ মাসেই শুরু হয়েছে। টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরির কাজ চলছে। এরপর বইয়ের চাহিদা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা বিগত বছরগুলোর মতো চাহিদা নেব না। এই চাহিদাপত্র বারবার যাচাই হবে। জেলা ও উপজেলা থেকে তথ্য নেওয়া হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে তথ্য নেওয়া হবে। মাউশি থেকেও ফের চাহিদা চাওয়া হবে। এ ছাড়া, বিগত বছরগুলোর চাহিদাপত্রের সঙ্গে নতুন চাহিদাপত্রের তুলনা করে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, চাহিদাপত্র মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও চলছে। তবে সফটওয়্যারে ইনপুট দিতে কয়েকদিন সময় লাগবে। সব কাজ শেষ হলে আমরা টেন্ডারের জন্য প্রস্তুত হবো। আশা করছি, এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। ২৩ মার্চে অবসরে গেছেন অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। বর্তমানে চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগ আমলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার্থী বানানোর হোতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী।
বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, গত বছর বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বই ছাপার কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এ বছর আগেভাগেই তারা কাজ শুরু করেছে, এটা ভালো।