জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধে মাঠে টিনের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতরা ক্ষমা চেয়েছেন। তারা আর ‘নারীদের খেলাধুলায় নাক গলাবেন না’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শুক্রবার উপজেলার তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবস্থানকালে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চা হাজি কওমি মাদরাসার নায়েবে মোহতামিমের পক্ষে কথা বলেন মাদরাসার শিক্ষক মোস্তাকিম হোসাইন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ‘দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে লজ্জিত’ বলে জানান।
শিক্ষক মোস্তাকিম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার তিলকপুরে নারী ফুটবল খেলা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাদের মধ্যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে যা হয়েছে, তাতে দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে লজ্জিত। আমরা ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করব না। যেখানে সরকার খেলাকে বৈধতা দিয়েছে, সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে আর কখনও যাব না। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
ভ্যাটকুরি মসজিদের খতিব ও তিলকপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা জানাই। সরকারি নিয়ম-নীতিতে খেলা হোক– এটা আমরাও চাই। আলেম-ওলামাদের মধ্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটি ঘটেছে। সামনের দিনে আর যেন না ঘটে, আমিও সেটিই চাচ্ছি। সরকারের বিরুদ্ধে আমরা যেতে চাই না।’
নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলার আয়োজন করায় গত মঙ্গলবার বিকেলে আক্কেলপুর উপজেলা তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করে স্থানীয় মুসল্লিদের একাংশ। ভাঙচুর শেষে ওই মাঠেই তারা অবস্থান নেন।
এ ঘটনায় তিলকপুর পুরোনো বাজার জামে মসজিদের খতিব আব্দুস সামাদ বলেন, খেলার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো পদক্ষেপ ছিল না। তবে সামান্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
খেলার আয়োজক স্থানীয় টি-স্টার ক্লাবের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান ইমন বলেন, তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির বিষয়। আমরা আলেম সমাজের সঙ্গে একত্র হয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, এখানকার জনগণ সবাই একতাবদ্ধ হয়েছেন। এখানে খেলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা নেই। খুব দ্রুতই আমরা খেলা পরিচালনা করতে পারব।
এর আগে ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমারকে। অন্য সদস্যরা হলেন– আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান, জেলা ক্রীড়া অফিসার আরিফুজ্জামান ও ছাত্র প্রতিনিধি মাহফুজ আহমেদ। আগামীকাল রোববারের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।