বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতির চাহিদামত ঘুষের টাকা দিতে না পারায় তিন শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঐ তিন জন শিক্ষক স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে প্রায় ২০ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করে আসছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া দোলাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চাকরি হারিয়ে ঐ তিন শিক্ষক বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ঐ বিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত মৌলভী শিক্ষক ছয়ফুল ইসলাম বর্তমানে রংপুর সিও বাজারে রিকশার গ্যারেজ পরিচালনা করেন।
তিনি কান্নাজড়িত বলেন, ‘আমাকে নিয়োগ দেয়ার সময় সভাপতি শাহ আলম আমার কাছ থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমি বাড়ির ভিটা বিক্রি করে ঐ টাকা জোগাড় করেছিলাম।
পরে এমপিও করার সময় তিনি আমার কাছে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি দিতে না পারায় তিনি আমাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন।’
চাকরিচ্যুত গণিত বিষয়ের শিক্ষক লাইসুজ্জামান বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীসহ ঐ স্কুলে কর্মরত ছিলাম। আমরা দুই জন মিলে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলাম।
পরে আমাদের এমপিও করার আগে আরও ২৪ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় বাদ দিয়েছেন।’
সূত্র জানায়, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষককে এমপিওভুক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হতে গেলে অবশ্যই ওই প্রতিষ্ঠানে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত (বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো( ব্যানবেইস) এর তালিকায় কমপক্ষে তিনটি অর্থ বছরে নাম থাকতে হবে।
২০১৩ থেকে ২০২৩ এর তালিকায় কোথাও তাদের নাম নেই। তবে শুধুমাত্র ২০২৪ এর বেনবেজে তাদের নাম রয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই এগুলো যা হয়েছে, বাদ দিন।
একটা প্রতিষ্ঠান অনেক কষ্ট করে তৈরি করতে হয়। তাছাড়া যেখানে যান না কেন, টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিয়মের মধ্যে থাকলে সবকিছু সম্ভব হয় না। আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করব।’
এ বিষয়ে জানার জন্য রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. রোকসানা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বেনবেজের তালিকায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কমপক্ষে তিনটি খ্রিষ্টাব্দে অবশ্যই নাম থাকতে হবে।
তাছাড়া এমপিভুক্তির কোন সুযোগ নেই। বেনবেজের তালিকা বাদেও আরও অনেক অনিয়ম থাকতে পারে। সেজন্য ওই দুই শিক্ষকের এমপি ফাইল ফেরত গেছে।
যারা যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিল তারা কিভাবে ত্রটি-যুক্ত ফাইল পাঠিয়েছে আমার বোধগম্য নয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
দুই শিক্ষকের এমপির আবেদন ফাইল ফেরৎ আসল কেন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মৌসুমী হক বলেন, ‘ঐ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পেয়েছি।
এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা তানজিলা আক্তার শুধু কাঠের পুতুলের মতো চেয়ারে বসে থাকেন।
সব কাজ করেন তার স্বামী ঐ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শাহ আলম। এর আগে শাহ আলম আমার স্বাক্ষর জাল করে কিছু কাগজপত্র ডিডি অফিসে পাঠিয়েছিলেন।
বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।