প্রতীকী ছবি
বিন্দু বিন্দু করে জমে উঠা সময়ের নামই জীবন। সময়ই জীবনের মূলধন। সময়কে কাজে লাগিয়ে জীবন সাজানো যায়, অযথা নষ্টও করা যায়। সময়কে মূল্যায়ন করা মানেই জীবনকে দামি বানানো। হেলাফেলায় সময় নষ্ট করে জীবনকে দামি বানানো যায় না। জীবনে যারা বড় হয়েছেন তারা সময়ের মূল্য দিয়েছেন। সময়কে কাজে লাগিয়েছেন।
সময়ের হাত ধরেই মুসলমান ইবাদত বন্দেগি আদায় করে। সময়ের কাঁটা ধরেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। সময়ের আবর্তনে আসে রোজার পবিত্র মাস। সময়ের বিবর্তনেই এক পড়ন্ত বেলায় ডাক আসে পরপারের।
তাই মুসলমানের কাছে সময়ের গুরুত্ব অনেক। সময় বয়ে যায় কলকল ধ্বনিতে। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। বরফ যেভাবে গলে গলে নিঃশেষ হয়ে যায়, সময়ও ফুরিয়ে যায় আপন গতিতে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে আসে সন্ধ্যা, আঁধার রাত। সকালে আবার নব উদ্যমে মহাশক্তিতে জেগে উঠে সূর্য। কিন্তু জীবনের সূর্য একবার ডুবলে দ্বিতীয়বার উদিত হয় না। তাই সময় থাকতে সময়ের মূল্য দিতে হবে।
সময়কে সাধ্যমতো লাভজনক কাজে লাগাতে হবে। সফল সময় সেটাকে বলা হয় যার দ্বারা দুনিয়া বা আখেরাতের কল্যাণ সাধিত হয়। সময়ের মূল্য সম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : পাঁচটি জিনিস পাঁচ জিনিসের আগে মূল্যায়ন কর- যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, অভাবহীনতাকে অভাবের আগে, অবসর সময়কে ব্যস্ততার আগে, জীবনকে মৃত্যুর আগে। (মুসতাদরাকে হাকিম: ৭৮৪৬)
কিভাবে সময়কে মূল্যায়ন করব?
আল্লাহ আমাদের অফুরন্ত সময় দান করেছেন। সময় আল্লাহর দান। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাছে সময়ের হিসাব চাইবেন। বিশেষ করে যৌবনের সুস্থ সবল ও কর্মঠ সময়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন? কোন কাজে সময় ব্যয় করা হয়েছে তার হিসাব দেওয়া ছাড়া সেদিন নিস্তার নেই।
এজন্য আমাদের উচিত সময়কে মূল্যায়ন করা। কিন্তু কিভাবে আমরা সময়কে মূল্যায়ন করব? কিভাবে সময়ের হেফাজত করব? এখানে কয়েকটি পদ্ধতি দেওয়া হলো :
১. সময়ের সদ্ব্যবহারে আগ্রহী হওয়া। কোনো সময় যেন অবহেলায় না কাটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
২. সময়কে পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা। সারাদিন কী কী কাজ করব তার তালিকা করে সে অনুযায়ী সময়কে ভাগ করা। যেন এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না হয় এবং কোনো কাজ ছুটে না যায়।
৩. দৈনন্দিন দায়-দায়িত্বের বাইরে অবসর সময়কে সুবর্ণ সুযোগ মনে করা। ব্যক্তি উন্নয়ন, অধ্যয়ন, জ্ঞান অর্জন, মানসিক বিকাশ ইত্যাদি কাজে সময় ব্যয় করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুটি নেয়ামতের মধ্যে মানুষ ধোঁকায় পড়ে আছে- সুস্থতা ও অবসর সময়।
(বুখারি শরিফ: ৬৪১২) মানুষ সুস্থ ও অবসর থাকলে আনন্দ ফুর্তিতে সময় নষ্ট করে। যা শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়।
৪. আল্লাহর জিকির থেকে কখনো উদাসীন না হওয়া। সর্বদা সব কাজেই আল্লাহর কথা স্মরণ রাখা। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয় তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা মুনাফিকুন: ৯)
৫. চলন্ত পথে জ্যাম বা সিগনালে পড়ে থাকা নাগরিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ইচ্ছা করলে এই সময়টাকেও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করা যায়। জ্যামে বসে তাসবিহ পাঠ, কোরআন তেলাওয়াত বা বই অধ্যয়ন করতে পারি।
সুতরাং আসুন, সময় সম্পর্কে সচেতন হই। সময়ের কাজ সময়ে করি। সময়ের অপচয় রোধ করি।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট