কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিক্ষিত বেকার | বিবিধ নিউজ

কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিক্ষিত বেকার

দেশের বিপুল পরিমাণ কর্মহীন জনবলের কারিগরি জ্ঞান নেই। অথচ কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির পাশাপাশি দক্ষতাভিত্তিক কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। দুর্বল শিক্ষা কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

#অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা শ্রম বাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। যার ফলে উচ্চশিক্ষিত হয়ে বের হওয়ার পরও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে যত শিক্ষিত হচ্ছে, তত বেকারত্ব বাড়ছে। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সে বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

বুধবার (২১ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত 'যুবদের সংস্কার ভাবনা' শীর্ষক সম্মেলনে এসব কথা উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী ফখরুদ্দিন আল কবির।

প্রথম অধিবেশনের বিষয় ছিল ‘কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি’। সম্মেলনে আলোচনা করেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (নিবন্ধন ও সনদায়ন) অতিরিক্ত সচিব আলিফ রুদাবা, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিডি জবসের সিইও একেএম ফাহিম মাশরুর, শেয়ার ট্রিপ লিমিটেডের সিইও সাদিয়া হক, শিখো প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও শাহীর চৌধুরী।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দেশের মোট কর্মহীন জনবলের প্রায় দুই কোটি মানুষের কোনো কারিগরি জ্ঞান নেই। অথচ কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির পাশাপাশি দক্ষতাভিত্তিক কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বেকার যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করা প্রয়োজন।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দক্ষতানির্ভর কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে গ্র্যাজুয়েটরা বের হচ্ছেন, তাদের অর্জিত শিক্ষার চাহিদা দেশ কিংবা বিদেশে কোথাও তেমন নেই। এ কারণে শিক্ষিত বেকার সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। দুর্বল শিক্ষা কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সরকারি চাকরির প্রতি শিক্ষিত তরুণদের বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে, যেখানে তারা সামাজিক মর্যাদা বেশি খুঁজে পান। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমান যুগে কর্মসংস্থানের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষভাবে জড়িত। তাই উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া অপরিহার্য। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে। বিশাল বেকারত্বের চাপ, বিশেষ করে তরুণদের ওপর বেশি পড়ছে। সরকারি চাকরির নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদার প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ এবং বিসিএস নির্ভর মানসিকতা তরুণদের বিকল্প কর্মসংস্থান থেকে দূরে রাখছে। অন্যদিকে আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলো যেসব পদের চাহিদা তৈরি করছে, তার তুলনায় দক্ষ জনবল খুব কম।

আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোয় প্রচুর পরিমাণে ডিজাইনার দরকার, প্যাটার্ন মাস্টার দরকার। ভাষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি আমাদের সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থাকে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় রূপান্তর করতে হবে। দেশে কেবল ম্যানেজার নয়, প্রয়োজন কার্যকর চ্যানেল, যারা দক্ষতা দিয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।’

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (নিবন্ধন ও সনদায়ন) অতিরিক্ত সচিব আলিফ রুদাবা বলেন, ‘সরকার দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সনদপ্রাপ্ত বেকারদের জন্য ব্যাংক ঋণের সুযোগ সৃষ্টি। এ উদ্যোগ বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে সহায়ক হবে।

এছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে শিল্প-কারখানা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি কার্যকর সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। সরকারের এ বহুমুখী প্রচেষ্টা বেকার সমস্যা সমাধানে এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

#অন্তর্বর্তীকালীন সরকার