বেলজিয়ামের রাজকুমারী এলিজাবেথ। যিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক পলিসি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত একটি কঠোর নীতি ঘোষণা করেছে।
এই নীতির আওয়তায় হার্ভার্ডসহ অন্যান্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সশরীরে ক্লাস করতে হবে। অন্যথায় তাদের ভিসা বাতিল করা হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজকুমারী এলিজাবেথের মতো হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন।
বেলজিয়ামের রাজপ্রাসাদের মুখপাত্র লোর ভানদুরনে এবং যোগাযোগ পরিচালক হাভিয়ার বেয়ার্ট উভয়েই এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা জানিয়েছেন, রাজকুমারী এলিজাবেথ সবেমাত্র তাঁর প্রথম বর্ষের পড়াশোনা শেষ করেছেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে স্পষ্ট হবে।
রাজপ্রাসাদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং স্থিতিশীল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
রাজকুমারী এলিজাবেথ বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং রানি ম্যাথিল্ডের জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বেলজিয়ামের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী।
হার্ভার্ডে যোগ দেওয়ার আগে, তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
হার্ভার্ডে তাঁর স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামটি দুই বছরের, যা শিক্ষার্থীদের জনসেবায় সফল ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই ভিসা নীতিটি মূলত কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনলাইন ক্লাসের উপর নির্ভরশীল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লক্ষ্য করে প্রণীত হয়েছে।
এই নীতির মাধ্যমে, প্রশাসন চায় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় সশরীরে ক্লাস শুরু করুক এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা যেন যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।
তবে, এই নীতিটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে, কারণ এটি অনেক শিক্ষার্থীর জন্য বাস্তবসম্মত নয়, বিশেষ করে যারা বর্তমানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারছেন না।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং এটিকে "অবৈধ এবং প্রতিহিংসামূলক" বলে অভিহিত করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে যে এই নীতিটি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট লরেন্স বাকো এই নীতির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই নীতির ফলে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত, এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই নীতির প্রভাব শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং বৈশ্বিক শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বেলজিয়ামের রাজকুমারী এলিজাবেথের ক্ষেত্রে, এই নীতিটি তাঁর ব্যক্তিগত শিক্ষা এবং বেলজিয়ামের ভবিষ্যৎ রানির প্রস্তুতি উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে না পারেন, তবে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং বেলজিয়ামের রাজপরিবারের উপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার উপর আস্থা এবং নির্ভরতার উপর একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি করেছে।
এটি স্পষ্ট যে, এই নীতিটি শুধুমাত্র রাজকুমারী এলিজাবেথের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নয়, বরং হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবনকেও প্রভাবিত করছে।
এই নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ উঠেছে। শিক্ষাবিদ, ছাত্র সংগঠন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই নীতির সমালোচনা করেছে এবং প্রশাসনের কাছে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
তারা যুক্তি দেখাচ্ছে যে, এই নীতিটি শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার এবং এটি বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে অমানবিক।
এই পরিস্থিতিতে, বেলজিয়ামের রাজপরিবার এবং সরকার উভয়ই সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং রাজকুমারী এলিজাবেথের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছে।
তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, রাজকুমারীর শিক্ষা যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় এবং তিনি যেন তাঁর ভবিষ্যৎ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।
এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার উপর একটি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
এটি স্পষ্ট যে, এই নীতিটি শুধুমাত্র রাজকুমারী এলিজাবেথের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নয়, বরং হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবনকেও প্রভাবিত করছে।