রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী নটর ডেম কলেজে একই দিনে দুই শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবার (১২ মে) দুপুরে কলেজের ভবন থেকে পড়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ধ্রুব ব্রুতদাস (১৮) এর মৃত্যুর শোক না কাটতেই সন্ধ্যায় একই প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. আরাফাত রহমানের (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আরাফতের মরদেহ সন্ধ্যায় রাজধানীর কমলাপুরের জসীমউদ্দীন রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। আটতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে আরাফাত তার দুই সহপাঠীর সাথে ভাড়া থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কালিকা প্রসাদ গ্রামে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম রাতে এই মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরাফাতের সহপাঠী মো. রিমন চৌধুরী জানান, সন্ধ্যায় তারা আরাফাতের কক্ষের দরজা বন্ধ দেখতে পান। ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় তারা কেয়ারটেকারের সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা আরাফাতকে ফ্যানের সঙ্গে বিছানার চাদর দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পান।
রিমন আরও জানান, তারা দ্রুত আরাফাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাত পৌনে আটটার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে, একই দিনে দুপুরে নটর ডেম কলেজের একটি ভবন থেকে পড়ে ধ্রুব ব্রুতদাস নামে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
ঘটনার সময় ধ্রুবর বাবা কলেজ গেটে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে শোকের মাতম চলছে।
একই দিনে নটর ডেম কলেজের দুই শিক্ষার্থীর এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে গভীর শোক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
দুটি ঘটনাই অপ্রত্যাশিত এবং মর্মান্তিক। কলেজের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এমন পরপর দুটি মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ধ্রুব ব্রুতদাসের ভবন থেকে পড়ে মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে আরাফাতের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যাকে কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কী কারণে একজন তরুণ শিক্ষার্থী এমন চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলো, তা এখনও অজানা।
নটর ডেম কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই দিনে দুটি তরতাজা প্রাণের ঝরে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
এই ঘটনা দুটি কেবল দুটি পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি নয়, বরং গোটা শিক্ষা সমাজের জন্য একটি গভীর ধাক্কা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন উভয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
তবে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ভবিষ্যতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল এই দুটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন যেন ভবিষ্যতে আর কোনো শিক্ষার্থীকে এমন পরিণতি বরণ করতে না হয়। এই দুটি মৃত্যু নটর ডেম কলেজের ইতিহাসে এক কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।