চারুকলাকে চবির মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

চারুকলাকে চবির মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের

চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে আমরা আর কোনো প্রতিশ্রুতির মাঝে থাকতে চাই না। শীতকালীন বন্ধ শেষে অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বরের পর দুই কার্য দিবসের মধ্যেই আমরা চারুকলা স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানাই। নতুবা আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।

#university

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটকে নগরী থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর দুই কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি না করলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ইনিস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান সোহেল ও নাফিসা তালুকদার সূচি। এসময় ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে লিঁয়াজো করে স্বৈরশাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে শহরে স্থানান্তর করেন। চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চারুকলা কলেজে স্থানান্তরের মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয়নি শিল্পীর রোহিত চৌধুরীর স্বপ্নকেও হত্যা করা হয়েছে। এই প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার মূল কারিগর ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের স্ত্রীসহ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্নজনকে নিয়োগ দিয়েছেন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, এসবের প্রেক্ষিতেই চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ২০২২ ও ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৮০ দিন ধরে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের ১০০তম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস বাহিনী। এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তৎকালীন স্বৈরশাসকের শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাসির উদ্দিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া কামাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। এসময় দুজন নারী শিক্ষার্থী সহ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আহত করা হয়।

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ওপর দমন পীড়ন মূলক আচরণ করা হচ্ছে বলে সম্মেলনে বলা হয়, 'এই হামলার পরেও শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কথা চিন্তা করে ক্লাস শুরু করেন। তবে ক্লাস শুরুর পর শিক্ষার্থীদের উপর শুরু হয় দমন পীড়ন মূলক আচরণ ও অত্যাচার।শিক্ষার্থীদের ফলাফল কারচুপি, ফলাফলে দীর্ঘ সময় নেওয়া সহ শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন করা হয়।'

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা প্রজ্ঞাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে আমরা আর কোনো প্রতিশ্রুতির মাঝে থাকতে চাই না। শীতকালীন বন্ধ শেষে অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বরের পর দুই কার্য দিবসের মধ্যেই আমরা চারুকলা স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানাই। নতুবা আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।

নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে চারুকলা ইনস্টিটিউট করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীতে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে চারুকলা ইনস্টিটিউট চবির মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। যেটা বড় আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা।

সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১০ ডিসেম্বর চারুকলা ইনস্টিটিউট চবির মূল ক্যাম্পাসে ফেরাতে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চারুকলা ইন্সস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) শামীম উদ্দিন খান।

#university