দেশের সংকটে জাতিসংঘের উদ্যোগ | মতামত নিউজ

দেশের সংকটে জাতিসংঘের উদ্যোগ

আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা এবং সংস্কার কমিশনের প্রধানরা।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলার ওপর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এবং বাংলাদেশ এই বিশ্ব সংস্থাটির সদস্যপদ লাভ করে ৪৪ বছর পূর্বে। এই সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ একবারই বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সক্রিয় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলো। কিন্তু জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সেই উদ্যোগ তেমন সফলতা পায়নি।

তিনি যে অস্কার ফার্নান্দেজকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন তিনি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। বাংলাদেশে আবারও একটি সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন এক সংকট দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এক রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্বনন্দিত নেতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফর করেন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং বিশ্ব মরিমণ্ডলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা এবং সংস্কার কমিশনের প্রধানরা। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরা হয়। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের নিজ নিজ সংষ্কার প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব এই বৈঠকের মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যাশা করে সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, কাজটি দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারকেই করতে হবে বলে তিনি জানান। টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তত রয়েছে। দেশের মানুষ তাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারে।

জাতিসংঘের মহাসচিব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। মহাসচিব বলেন, সংস্কার প্রয়োজন। জাতিসংঘ এতে পাশে থাকবে। সংষ্কার কীভাবে, কতোটুকু হবে, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হয়ে ঠিক করতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশ সংস্কার ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে। দেশটির এ সন্ধিক্ষণে শান্তি সংলাপ ও ঐকমত্য সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থনের কথাই এর মাধ্যমে ফুটে ওঠে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে জাতিসংঘ কতোটা ভূমিকা রাখতে পারবে। কেউ কেউ বলেছেন, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। আমি বলবো অধিকার নেই আবার আছেও। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেখানে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের ভিত্তিতে জাতিসংঘ ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ছাড়া আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর সেনা সমর্থিত সরকারের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট মহাবিজয় লাভ করে জানুয়ারি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সরকার গঠন করে এবং ওই সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে।

সংবিধান সংশোধনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। হরতাল-অবরোধ আর হিংসাত্মক কার্যকলাপে অনেক মানুষ হতাহত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হতে শুরু করে। অনেকেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে পড়েন। সহিংস পথ পরিহার করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এক চরম অনিশ্চয়তা ও ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে সমাধানের প্রচেষ্টায় অগ্রণী হন জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন। তিনি বিবদমান সব পক্ষকে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য জোর তাগিদ দেন।

বিবদমান পক্ষসমুহের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে তিনি পাঠালেন বিশেষ দূত হিসেব সে সংস্থার সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের তখনকার রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশে প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এর আগে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন দুই দলের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, রাজনৈতিক বিবাদ মেটাতে জাতিসংঘ কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি না।

সেজন্য তার দূত দুই দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সেই প্রেক্ষাপটে তারানকো ২০১২ এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে দুই বছর তিন দফায় বাংলাদেশে এসে দুই দলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। যদিও দুই দলকে তিনি কোনো সমঝোতার জায়গায় আনতে পারেননি। তারানকো মধ্যস্থতার বিষয়টি দুই দলই চেয়েছিলো বলে জাতিসংঘের সেই সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। তার মানে অতীতে জাতিসংঘ যে ভূমিকা রেখেছিলো সেই ভূমিকা উভয় দলই গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিয়েছিলো এবং এভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে জাতিসংঘ প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলো।

কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কী এবং সেখানে জাতিসংঘ ককোটা কী করতে পারে? অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে। ছয়টি কমিশনের দেয়া সংস্কারের সুাপারিশ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।

অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সব দল সংস্কারকে সমর্থন করলেও পদ্ধতি এবং সময়সীমা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বিএনপি দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে মৌলিক সংষ্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ে তৈরি করতে হবে বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারা বলছে, গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে অন্যথায় সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না। জামায়াত জানিয়েছে, টেকসই গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জনমনে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিলো।

এই প্রত্যশার আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ শুরু করে। দেশের ভেঙে পড়া সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করার অভিপ্রায়ে সংস্কার কমিশনও গঠন করেছে। কিন্তু সেই সংস্কার কতোদিন চলবে। সরকার যদিও ২০২৬-এর জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে কিন্তু বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি তাতে অস্থিরতা প্রকাশ করছে। করার কিছু কারণও আছে। দলটি বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল অথচ ক্ষমতার বাইরে ষোল বছর। দলের বহু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে পূর্ববর্তী পতিত সরকারের হাতে।

হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেল ও জুলুম সহ্য করতে হয়েছে তাই তারা আর অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘ স্থায়িত্ব চাচ্ছে না। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চাচ্ছে একটি অনিরাপদ পরিবেশ, শান্তির পরিবেশ, জিনিসপত্রের দাম তাদের সীমার মধ্যে থাকবে কিন্তু দেশব্যাপী তারা কি প্রত্যক্ষ করছে?

দেশে কোথাও যেনো কারোর নিয়ন্ত্রণ নেই। শিক্ষাঙ্গনগুলো উত্তপ্ত, চরম উত্তপ্ত, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে কারণে-অকারণে রাস্তায়, শুধু রাস্তায় নয় দিনের পর দিন কোটি কোটি মানুষের ভোগান্তি আর দুর্ভোগ বাড়িয়ে রাস্তা, প্রধান সড়ক বন্ধ করে রাখছে। কোনো প্রতিকার যেনো নেই। সব ধরনের অফিস আদালতে কারোর কোনো কিছু প্রয়োজন হলেই রাস্তা বন্ধ, অবরোধ আর প্রতিবাদ।

জিনিসপত্রের দামে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কিশোর গ্যাংয়ে দেশ ছেয়ে গেছে। চাঁদাবাজি চলছে অবাধে, ঠিক পূর্ববর্তী সরকারের আমলের মতো। গার্মেন্টস শ্রমিকরা সময় সময় রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিচ্ছেন। দেশে নতুন বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না, তবে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা একেবারেই নেমে যাবে যার পুরো দায়িত্ব গিয়ে পড়বে প্রধান উপদেষ্টার ওপর। তারপরেও প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে নির্বাচন দিতে রাজী নয় সরকার বিশেষ করে ছাত্র-নেতৃবৃন্দ যারা তাদের বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে, নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে অটোক্রাটিক সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তাদের কথাও তো শুনতে হবে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ কি করবে? এখানে জাতিসংঘের কি সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে? তবে, জাতিসংঘ আমাদের যে পরামর্শ ও আশ্বাস দিয়েছে সেটি আমাদের জন্য বিরাট সম্পদ, বিরাট মেসেজ।

সিদ্ধান্ত আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে। আমরা জানি, বিশ্বের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই উদ্দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর সময়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই সংস্থাটিকে প্রতিষ্ঠিত করেন কিন্তু এই সংস্থার তেমন কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। জাতিসংঘকে নেগোসিয়েশনের ভূমিকাই পালন করতে হয়। এটিকে শক্তিশালী করা, এর নির্বাহী ক্ষমতা বাড়ানো না বাড়ানো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিশেষ করে বড় বড় রাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশগুলোর। রাষ্ট্রগুলো সহায়তা না করলে জাতিসংঘের একার তেমন কোনো কিছু করার নেই। জাতিসংঘ চলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থায়নে।

সংস্থাটিকে শক্তিশালী করা, সম্মান করা এবং এর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হচ্ছে সভ্য রাষ্ট্রগুলোর কাজ। জাতিসংঘের ঐকান্তিক চেষ্টা ও ইচ্ছে সত্ত্বেও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। গাজা ইসরাইল দখল করে নিচ্ছে আমেরিকার মদদে। সেখানে জাতিসংঘ কিছুই করতে পারছে না। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না জাতিসংঘ। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান-ভারত সংঘাত লেগেই আছে এবং কাশ্মীর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘মরা ঘোড়া’ আখ্য দিয়েছিলেন। এভাবে জাতিসংঘকে অনেকেই দোষারোপ করেন কিন্তু সংস্থাটিকে শক্তিশালী করার পথ কেউ বাতলে দিচ্ছেন না।

এতো কিছুর পরেও জাতিসংঘই বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের আশা ও ভরসার স্থল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এখনো দেখেনি, এখানে নিশ্চয়ই জাতিসংঘের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। জাতিসংঘকে আমাদের সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। তবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন সংকট নিরসনে নিজেদেরকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। হাজার সমস্যার মধ্যে জনপ্রতিনিধিদের কাছেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। গণতন্ত্র আসলেই, রাজনীতিবিদদের কাছে দেশের দায়িত্ব তথা ক্ষমতা গেলেই যে, দেশ শান্তিতে ছেয়ে যাবে তা নয়। তারপরেও একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।

আমরা দেখেছি, ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করেছিলো। ওই নির্বাচন সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ৯০ দিনের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে।

অর্থাৎ যেকোনো পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়। তবে, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ব্যতিক্রম হয়েছিলো। কারণ, সেটি ছিলো ভিন্ন ধরনের সরকার। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলো না, ছিলো সেনাশাসিত সরকার। বিশ্বনন্দিত নেতা, দক্ষ ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস পূর্ববর্তী যেকোনো সরকাররের চেয়ে অধিকতর যোগ্য। কাজেই তার সরকারের নির্বাচনে আয়োজন সময় ক্ষেপণের প্রয়োজন নেই।

দেশের পরিস্থিতি যেটি দাঁড়িয়েছে তাতে নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়াটাই শ্রেয় সেখানে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকারও দরকার নেই। আর জাতিসংঘের কাছে কোনো কিছু নালিশ করারও দরকার নেই। তবে, সরকারে যারাই আসুক, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্বনন্দিত নেতাকে দেশের মানুষের কল্যাণে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কারণ, গোটা বিশ্বে এবং বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘে তার রয়েছে অবাধ গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা । দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই ডিফিডেন্ট আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক