ছবি : সংগৃহীত
দিন দিন বাড়তে থাকা তহবিল সংকটের কারণে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুর শিক্ষা এখন হুমকির মুখে। এ বিষয়ে সতর্ক করে শনিবার (৩১ মে) ইউনিসেফ জানিয়েছে, অবিলম্বে টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়া শরণার্থীদের সব ধরনের সহায়তার সুযোগ ঝুঁকিতে পড়ছে, যার মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী শিবিরে শিশুদের জন্য জরুরি মৌলিক শিক্ষার সুযোগ হারানোর মতো বিষয়ও রয়েছে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় ইউনিসেফ পরিচালিত কার্যক্রমের জন্য মানবিক সহায়তার তহবিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইউনিসেফের সহায়তাপুষ্ট শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভর্তি হওয়া স্কুলগামী শিশুদের ৮৩ শতাংশের শিক্ষার ওপর।
নতুন তহবিল গঠন এবং নতুন করে কার্যক্রম সাজানোর চেষ্টা চালানোর পরেও তহবিল সংকটের কারণে ইউনিসেফকে কিছু কষ্টদায়ক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর মধ্যে কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করা হোস্ট কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকদের সহায়তা স্থগিত করার মতো বিষয় রয়েছে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন মাসের মধ্যে সর্বমোট এক হাজার ১৭৯ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের ইউনিসেফের অংশীজনদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে। এই স্বেচ্ছাসেবকেরা মূলত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সদস্য।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “যে শিশুদের কথা আমরা বলছি, তারা বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় শিশুদের অন্যতম।”
তিনি বলেন, “জরুরি শিক্ষা সেবাসমূহ অব্যাহত রাখার জন্য আমরা সম্ভাব্য সব কিছু করছি। ইউনিসেফ অন্যান্য কিছু তহবিল আকৃষ্ট করতেও সক্ষম হয়েছে-কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলো পেতে বিলম্ব হবে এবং ফলে ইউনিসেফ শিক্ষা কেন্দ্রগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। জরুরি তহবিল ছাড়া শিক্ষা কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকতে পারে এবং তাতে রোহিঙ্গা শিশুদের পুরো প্রজন্ম পেছনে পড়ে থাকার ঝুঁকিতে পড়ছে।”
তহবিল ঘাটতির কারণে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো অন্তত ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জুনের শেষ নাগাদ বন্ধ থাকবে, এই বন্ধ হবে ঈদের বাড়তি ছুটির সঙ্গে একসাথে। এরপর শিক্ষা কেন্দ্রগুলো খোলার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করবে নতুন তহবিল পাওয়ার ওপরে।
পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে খুদে শিক্ষার্থীদের (কিন্ডারগার্টেন থেকে গ্রেড ২) আর ইংরেজি, বিজ্ঞান বা সামাজিক শিক্ষা শেখানো হবে না। শুধু মৌলিক বিষয়গুলো- সাক্ষরতা (রোহিঙ্গা), বার্মিজ, গণিত, জীবন দক্ষতা ও সামাজিক-মানসিক শিক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন কোনো পাঠ্যপুস্তক বা শিক্ষক নির্দেশিকা কেনা হবে না। শিশুদের বিগত বছরগুলোর বইপত্র সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে বলা হবে, তাতে বইগুলোর অবস্থা যা-ই হোক না কেন।
বছর শেষের মূল্যায়ন এবং প্লেসমেন্ট টেস্ট (কোন শিশু কোন শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য তা বের করার পরীক্ষা) বাতিল করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকেরা ছুটির সময় পারিশ্রমিক পাবেন না এবং অর্থায়ন ফিরে না আসা পর্যন্ত শুধু স্বেচ্ছাশ্রমে পড়ানো চালিয়ে যেতে পারেন।
শিশুদের জন্য সেবা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিকে সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে ইউনিসেফ, সবচেয়ে প্রভাব রাখতে পারে এবং অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী এমন কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলোকে সচল রাখার জন্য ইউনিসেফ তার নিজের কর্মী আগে কমিয়েছে। এটা এ দেশে কর্মী হ্রাসের বড় ঘটনাগুলোর একটি এবং এটা বিশ্বব্যাপী ঘটছে। ইউনিসেফ অগ্রাধিকার দিয়েছে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো খোলা রাখার ওপর। সেজন্য লোকবল কমিয়ে একটি ছোট দল রেখেছে এগুলো পরিচালনার লক্ষ্যে। এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু হাতে পাওয়া তহবিল যেন সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।