শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম মারধরের শিকার হয়েছেন। রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আখালিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে পাঠানটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আখালিয়া এলাকার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে এক মোটরসাইকেল আরোহী আকস্মিকভাবে তাঁর গাড়ির সামনে এসে পড়েন।
ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি ধাক্কা লাগে। এর পরপরই মোটরসাইকেল থেকে নেমে এসে ওই ব্যক্তি অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের উপর চড়াও হন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে মারধর করেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় অধ্যাপক ইসলামকে তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অধ্যাপকের উপর হামলার খবর দ্রুত ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রাতেই শত শত শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে এসে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
প্রথমে তারা মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে পুনরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের এই আকস্মিক অবরোধের ফলে পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন যে সড়ক অবরোধ চলাকালে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে। এই ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা 'ভুয়া ভুয়া' স্লোগান দিয়ে সেনাবাহিনীর এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আল-শাহরিয়ার জানান, তিনি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন হঠাৎ পেছন থেকে সেনাবাহিনী এসে তাদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক বেলাল হোসেন শিকদার এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পিএমই বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সাথে স্থানীয় এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি অধ্যাপককে হেনস্তা করে এবং মারধর করে। এই ঘটনার জেরেই মূলত শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করেছে। মূল অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তবে, সড়ক অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।