যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া।। ছবি-সংগৃহিত
গতকাল শুক্রবার (২০ জুন, ২০২৫) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত ও চরম উত্তেজনাময় পরিস্থিতি নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই বৈঠকেও উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ এবং একে অপরের বিরুদ্ধে দায় চাপানোর চেষ্টা দেখা যায়। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়ার একটি ‘ছোট্ট’ ভুল, যা মুহূর্তেই আলোচনার জন্ম দেয়।
বৈঠকে বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া অপ্রত্যাশিতভাবে বলে বসেন, “মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ও দুর্ভোগ ছড়াচ্ছে ইসরায়েল।”
তার এই মন্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, কারণ আদতে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছিলেন এবং ভুল করে ‘ইরানের’ জায়গায় ‘ইসরায়েল’ শব্দটি ব্যবহার করেন।
নিজের ভুল বুঝতে পেরেই তিনি দ্রুত তা শুধরে নেন এবং পরে ইরানের নাম উল্লেখ করে তেহরানের তীব্র সমালোচনা করেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের জন্য ইরানকে দায়ী করে ডরোথি শিয়া বলেন, “নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি সংযত করার জন্য তেহরানের একটি চুক্তিতে রাজি হওয়া উচিত ছিল।” তার এই সংশোধিত বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হয়।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবর অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদের গতকালের বৈঠকে ইরান ও ইসরায়েল উভয়ই তাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে চলমান সংঘাতের দায় চাপানোর চেষ্টা করে।
এই বৈঠকে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা নিজেদের অবস্থান জোরদার করতে এবং প্রতিপক্ষকে হেয় করতে কোনো কসুর করেননি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি ইসরায়েলকে এমন একটি দেশ হিসেবে আখ্যা দেন, যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা এবং অন্যান্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে।
তিনি তার বক্তব্যের সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানি শিশুদের ছবি তুলে ধরেন, যা সভার পরিবেশকে আরও আবেগপ্রবণ করে তোলে। ইরান দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলকে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী করে আসছে এবং এই অভিযোগগুলো নতুন নয়।
জবাবে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন ইরানের এই অভিযোগগুলোকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেন। তিনি ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানির বক্তব্যকে ‘ভুক্তভোগী সেজে নাটক করা’ বলে অভিহিত করেন।
ড্যানন আরও বলেন যে, ইরান এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিচ্ছে এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। ইসরায়েল সবসময়ই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধী।
এই উত্তপ্ত বাদানুবাদ থেকে স্পষ্ট যে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান বৈরী সম্পর্ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চেও চরম উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনছে এবং কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়তে নারাজ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই অসতর্ক মন্তব্য সাময়িক হাস্যরসের সৃষ্টি করলেও, তা মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির গভীরতাকেই তুলে ধরে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে।