বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়া মানে আসল কাজের চেয়ে এতো বেশি জঞ্জাল আর অকাজ তৈরি হয় যে, অকাজের ভিড়ে কোনো কাজই হয় না বা করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।
বুধবার অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, আমাদের ভিসিদের যতো কাজ তার ৮০ ভাগ কাজই পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নেই বা করতে হয় না। তাদের এই ৮০ ভাগ অকাজ করতে হয় না বলে অন্য দেশের ভিসিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল নিয়ে ভাবার সময় পান, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সত্যিকারের কাজ করার সময় পান।
এ পোস্টে তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে লেখেন: পৃথিবীর কোনো দেশের ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের সব শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের নেতৃত্ব দেয়? পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নানারকম অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে হয় বা প্রধান অতিথি হিসেবে থাকতে দৌড়ের ওপরে থাকতে হয়? পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের শিক্ষকদের ছুটির তদবির, প্রমোশনের তদবির, বাসার তদবির, প্রভোস্ট হওয়ার তদবির শুনতে হয়? পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ছাত্রদের রাজনৈতিক সমস্যা, নানা দাবি মেটানোর সমস্যা সমাধানে মিটিং করতে হয়।
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন লেখেন: একটা ঘটনা বলি। আমি তখন আবাসিক শিক্ষক। আবাসিক ছাত্রদের জন্য কিছু খেলার সরঞ্জাম যেমন ব্যাডমিন্টন ও আনুসাঙ্গিক কিছু কিনতে হবে। প্রভোস্ট আমাকে দায়িত্ব দিলেন। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না সামান্য কোটা টাকার খেলাধুলার জিনিস কিনতে আমাকে কেনো যেতে হবে। হলে অনেক কর্মচারী ও কর্মকর্তা আছেন, তারাই পারেন। পরে আমাকে বলা হলো সবাইকে বিশ্বাস করা যায় না। আমাকে বলা হলো আমি যেনো কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ছাত্রদের নিয়ে যাই। গেলাম এলিফ্যান্ট রোডে। ছাত্ররা আমাকে একটা দোকানের নাম বললো আর বললো ওটাই সবচেয়ে ভালো। ওখানে গিয়ে কিনলাম। দোকানদার কেনো জানি আমার ফোন নম্বর জেনে নিলেন। কিনে বাসায় আসার পর দোকানদার আমাকে ফোন করলেন। ফোন ধরলে আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন। কেনো? কারণ, ছাত্ররা নাকি আগেই দোকানে গিয়ে যেগুলো কিনেছি সেগুলোর দাম বাড়িয়ে রেখেছে এবং ছাত্ররা পরে সেই টাকা দোকানদারের কাছ থেকে নেবে। যারা ভবিষ্যতে শিক্ষক হবে, আমলা হবে, মন্ত্রী, এমপি হবে, পুলিশ হবে তারা এমন। অথচ ছাত্ররা যদি নিয়ম মেনে চলতো। শিক্ষকদের আবাসিক শিক্ষক বা প্রভোস্ট হতে হতো না। এই শিক্ষকদের কতো সময় সাশ্রয় হতো ভাবতে পারছেন?
নিরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তাই। আমাদের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি শান্তিতে দেশ চালাতে পারছে? প্রতিদিন এতো এতো আজাইরা কাজ, আজাইরা দাবি, আজাইরা আবদার, যে এইগুলো শুনতে শুনতেইতো দিন পার। এই উপদেষ্টাদেরতো সময়ই দেয়া হচ্ছে না। নানা দাবি, নানা ষড়যন্ত্র, নানা কথা, নানা ন্যারেটিভ দিয়ে এদেরকে দৌড়ের ওপরে রাখছে। দেশ নিয়ে দুদণ্ড বসে একটু ভাবার সময় কি এরা পাচ্ছে? পাহাড়সম এক্সপেকটেশন, যোগ করেন তিনি।