টানা ভারী বর্ষণে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ পানিতে ডুবে গেছে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে কলেজে জলাবদ্ধতার সমস্যা কাটেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুকুর খননসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েও বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখনও পর্যাপ্ত নয়। যার ফলে বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।
১২৮ বছর পুরনো এ প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ বাংলার প্রাচীন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজগুলোর অন্যতম। বর্ষাকালে কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ একেবারেই অনুকূল থাকে না। বিশেষ করে ছাত্রাবাসগুলোর অবস্থা নাজুক হয়ে ওঠে। টানা বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের নিচতলায় পানি উঠে যায়, যার কারণে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে হল ছেড়ে বন্ধুদের মেস বা নিজ বাড়িতে চলে যেতে হয়।
গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতেও এ সমস্যা ফের প্রকট হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, রসায়ন ভবন থেকে মিলেনিয়াম ভবন, বিজ্ঞান ভবন-২, লাইব্রেরি ভবন এবং কলাভবনের নিচতলায় হাঁটু সমান পানি জমে রয়েছে। এছাড়া, ২ নম্বর গেট থেকে কলাভবন পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে পানি জমে শিক্ষার্থীদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। পানির গুণগত মানও খুব খারাপ, কালো ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি এডিস মশার প্রজনন বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ক্যাম্পাসের তিনটি ভবনের পাশেই রয়েছে গভীর পুকুর। পুকুরের উত্তর দিকে রয়েছে ছাত্রীদের আবাসিক হল, দক্ষিণে খেলার মাঠ ও পরিত্যক্ত ডোবা, আর পূর্বদিকে রেললাইন লাগোয়া কিছু টিনশেড ভবন। পশ্চিম দিকে অবস্থিত তিনটি ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকছে, কারণ পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
এবারের বর্ষায় এমন জলাবদ্ধতায় স্থানীয়দের মধ্যে নতুন এক অদ্ভুত দৃশ্যও দেখা গেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বড়শি ও ছল হাতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ শিকারে নেমেছেন স্থানীয়রা। ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের রুমে জমে থাকা পানিতে মাছ শিকার করছেন।
নজরুল হলে থাকা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াজুর রহমান বলেন, রুমের বারান্দায় পানি উঠে গেছে, আমরা মশারি দিয়ে মাছ ধরে বালতিতে তুলে রাখছি। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে নিচতলায় চলে গেছেন, যারা উপরের তলায় থাকে তারা এখনো রয়ে গেছে।
জলাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গণিত বিভাগের শাহাদাত হোসেন সৈকত বলেন, এই সমস্যা নতুন নয়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে লেগেই আছে। বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানি জমে পড়ে। প্রতি বছর মেঝে উঁচু করার কথা বলা হলেও কোনও বাস্তব সমাধান হয়নি।
পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাফিজ বলেন, বৃষ্টির সময় আমাদের ল্যাবগুলো ব্যবহার করা যায় না। দেয়াল আর মেঝের অবস্থা খুবই খারাপ।
ইতিহাস বিভাগের সাবরিনা উর্মি বলেন, লাইব্রেরিতে বই পড়তে গেলে সমস্যা হয়, বর্ষায় আমাদের কলেজে জলাবদ্ধতা হয়, ভবনগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। মেঝে উঁচু ও রাস্তাঘাট সংস্কারের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। মেঝে উঁচু করলেও কোনো সুফল হয়নি। আশেপাশের হাউজিং এলাকা ও বিসিকের পানির কারণে কলেজের পুকুরে পানি ঢুকে যায়। আমাদের কলেজ নীচু জায়গায় হওয়ায় এ সমস্যা লেগেই থাকে। আমরা চারদিক থেকে বাউন্ডারি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যা হলে আশেপাশের পানি প্রবেশ বন্ধ হবে। আশা করছি, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে।