সনদ বিক্রি, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার, শিক্ষার্থী কেনাবেচা এমন সব অভিযোগ দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে।
দালালের মাধ্যমে কমিশন ভিত্তিতে শিক্ষার্থী জোগাড় ও ভর্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আয় ও দুর্নীতি। নামে অলাভজনক হলেও নানা কৌশলে বিপুল অর্থ লুটছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর না করা, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নানা কারণে ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এর মধ্যে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি অন্যতম।
সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
ইউজিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলো কমিশন। সেই প্রতিবেদনের আলোকে ইউজিসিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর না করা,শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা অমান্য করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা, আর্টস ফ্যাকাল্টিতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ডিন নিয়োগ দেওয়া, একই ব্যক্তি ডিন এবং বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার জন্য তদবিরে নেমেছে তদবির পার্টি ।
খুন ও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার আওয়ামী লীগের শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনির সঙ্গে আঁতাত করে এসব বিশ্ববিদ্যালয় একাধিকবার সময় বৃদ্ধি করেছে। তদবিরবাজদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী, ২২টি শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অন্যতম হচ্ছে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের তারিখ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার অনুমোদিত ভূমি ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ সাত বছর। তবে প্রয়োজনসাপেক্ষে এ সাময়িক অনুমতি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা যাবে।
স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কয়বার?
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে যাত্রা শুরু করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির (এসইউ) স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শুরু করে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এবং তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। যিনি বর্তমানে একাধিক মামলার আসামী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খিলগাঁও থানার ৭৫নং ওয়ার্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রায় ২ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীরা যেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ।
তিনি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজনের অনুমোদন প্রদান করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং সল্প সময়ের প্রস্তুতিতে উক্ত আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল আলিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চায অধ্যাপক ড. মো. আবুল বাশার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আল-আমিন মোল্লা ও রেজিস্ট্রার এস এম নূরুল হুদাসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
অভিন্দন জানানোয় বিরক্ত ভর্তিচ্ছুক ও অভিভাবক:
শিক্ষার্থী ভর্তিতে কমিশন ভিত্তিক দালাল নিয়োগের অভিযোগ পুরনো। নতুন অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মোবাইলে অভিনন্দন জানিয়ে এসএমএস পাঠানো। অনার্সে ভর্তির জন্য এমন পন্থা অবলম্বন করছে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি’কর্তৃপক্ষ।
আর এতে যারপরনাই বিরক্ত হচ্ছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। দৈনিক আমাদের বার্তাকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ক্ষুদেবার্তা পেয়ে তারা বিভ্রান্ত ও বিরক্ত। ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে তাদের পার্সোনাল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছে সেটিও তারা কেউ বলতে পারছেন না।
আর তারা তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য আবেদনও করেননি। তাহলে কিভাবে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, সে প্রশ্নও তাদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা- সমালোচনা
এদিকে, ক্ষুদেবার্তা দেওয়া লিংকে প্রবেশ করলে স্কলারশিপের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্টো ভর্তিচ্ছুদের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে একটি তথ্য ছক প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সেটাকে অনলাইন ভর্তির প্রাথমিক তথ্য পূরণ নামে অভিহিত করছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তিচ্ছুকদের নম্বরগুলো নানাভাবে সংগ্রহ করে এই ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হচ্ছে। যাতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসে শিক্ষার্থীরা।
তবে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হওয়া বিষয়টি তারা ভর্তির বিজ্ঞাপন হিসেবে মনে করছে। তাছাড়া এইচএসসি-এসএসসি ফলের ভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ৫০% থেকে ১০০% স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, এখন চলছে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির মওসুম। অনেক ভর্তিচ্ছু অপেক্ষা করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। আবার অনেকে বেসরকারিতে ভর্তি হবেন।
ভর্তির এই মওসুমকে কাজে লাগিয়ে এই অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, এমন অভিযোগ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলছেন, ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে এমন ক্ষুদেবার্তায় তারা অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
কেমন করে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এসব ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছে সেটিও তারা কেউ বলতে পারছেন না। এসব ক্ষুদেবার্তা কি আসলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে নাকি অন্য কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছে সে বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
স্কলারশিপের জন্য আবেদন না করলে মুঠোফোনে এমন ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের কর্মকর্তারা। যেহেতু স্কলারশিপের জন্য কোনও শিক্ষার্থী আবেদন করেনি তবুও তাদেরকে এমন ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর অন্যায় বটে।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শামীম আরা হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।